অর্থনীতি ডেস্ক : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোর আগুন ঝলসে দিয়েছে বদরুজ্জামানের পিঠ। কোমরের নিচেও বেশ খানিকটা জায়গা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঘুরে আসতে হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকেও।
৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুÐের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাÐ ও বিস্ফোরণের পর বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন তিনি। ডিপোতে মালামাল সরবরাহ করে গাড়ি পাশে রেখে আগুনের ভয়াবহতা দেখছিলেন এই গাড়ির চালক বদরুজ্জামান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান হারান তিনি। বললেন, দুই মিনিটও পাশে দাড়াতে পারিনি তার মধ্যেই আগুন ধরে যায়। বার্ন ইউনিটের বিছানায় আরও একজন কাভার্ড ভ্যানের চালক নজরুল। বসা অবস্থা থেকে শুতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। বললেন, সেদিনের ঘটনায় তাঁর গাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল। দগ্ধ হন তিনিও। এতে তাঁর শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। এখন চোখের সামনে যা দেখেন, সবই কুয়াশার মতো ঝাপসা মনে হয় তার।
নজরুলের এক মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আরেক মেয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর। সেদিনের ঘটনা ভুলতে পারেন না তিনি। নিজে এখন অক্ষম হওয়ায় পরবর্তীতে কিভাবে সংসার চলবে জিজ্ঞাস করলে বলেন, ‘জানিনা কিভাবে চলবো; আল্লাহই ভালো জানেন।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৫২০ নম্বর ওয়ার্ডে পাশাপাশি বিছানায় বদরুজ্জামান ও নজরুলের মতো সীতাকুÐের ঘটনায় আহত মোট আট জন ভর্তি আছেন। তারা অনেকটা শঙ্কা মুক্ত হলেও পরিবার কিভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ কপালে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীরা জানালেন, তাঁরা শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন। এ ছাড়া ডিপোর মালিকপক্ষ থেকে তিন দফায় ১৫ হাজার করে টাকা পেয়েছেন। তবে তাঁদের সুস্থ হওয়া, কাজে ফেরা-সবই অনিশ্চিত। তাই এ সহায়তা দিয়ে আর কত দিন চলা সম্ভব, তা জানেন না। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম জানান, সীতাকুÐ অগ্নিকাÐের ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন ২২ জন। এর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, চুড়িহাট্টা থেকে অনেক মানুষ এখানে ভর্তি হয়েছেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বেশিরভাগই। সচেতন থাকলে এরকম অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়াতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুÐের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাÐ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪১ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া দগ্ধ হন অনেকেই। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছিলেন ২২ জন। এর মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ জন। সূত্র : আরটিভি অনলাইন, চ্যানেল২৪