ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ১৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৩ হাজার ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ১২৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত জুনের তৃতীয় সপ্তাহে ব্যাংকগুলো নিজ নিজ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের এ হিসাব প্রাক্কলন করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমেছিল। ওই সময় খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বা মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৪৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-এর সঙ্গে ব্যাংকগুলোর সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি ৩৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে বলা হয়েছিল। সেদিক থেকে বলতে গেলে এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ হাজার ৩৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ বাড়ার শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রূপালী। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের শীর্ষে থাকা জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব মতে, গত জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ১০,৩৯৫ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ৯,৯৯০ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ১৪,৪৩৪.১৫ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ১১,৮৯০ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৫,৭০০ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭,০০০ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ১৫ শতাংশ।
গত জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৩,৮৬৪.৫৬ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ৫০৫৬.১৯ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
গত জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৭,৯৮৫.৫২ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭,১২৪.০৭ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।
গত জুন শেষে বিডিবিএল-এর খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৬৫৯.৩৪ কোটি টাকা এবং ডিসেম্বর শেষে ছিল ৬২৫.২৫ কোটি টাকা)। ব্যাংকটিতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।