
৫২ বিলিয়ন রপ্তানি আয়ে চমক দিয়ে বছর শেষ
মো. আখতারুজ্জামান : দেশের পণ্য রপ্তানি খাত প্রথমবারের মত ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এই সময়ে রপ্তানি আয়ে মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর এই আয়ে ৮০ শতাংশের বেশি অবদান রয়েছে তৈরি পোশক খাতের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ আয়। বছরজুড়ে প্রবৃদ্ধিও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এর মধ্যে দিয়ে সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড হল।
গত অর্থবছরের ১২ মাসে বাংলাদেশে থেকে পাঁচ হাজার ২০৮ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ এগিয়ে এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. ফারুক হাসান বলেন, নানা সঙ্কটেও আমরা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। করোনার মধ্যেও অনেক কষ্ট করে আমরা ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। সেইসঙ্গে তৈরি পোশাকের ইউনিট প্রাইস গড়ে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। যার ফলে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমাদের আরও নতুন চ্যালেঞ্জে আসতেছে। কারণ আবারো করোনার প্রকোপ বাড়ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও এখনও চলছে।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানির এই বিশাল প্রবৃদ্ধি আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই বড় সুখবর। তবে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমিয়ে ডলারের সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দেখা যাচ্ছে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৩৪ শতাংশ। আর আমদানি বেশি হয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। তাই বৈদেশিক ব্যয় মেটাতে ডলার ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সহ-সভাপতি সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতে টাকার অংকে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি পোশাক রপ্তানির সংখ্যাগত প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে খাত অতটা লাভবান হয়নি। কারণ পোশাক শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি বিবেচনায় পোশাকের রপ্তানিতে আরও প্রবৃদ্ধি হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশ সেই মূল্য আদায় করতে পারেনি। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসবে।
ইপিবির তথ্যমতে, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এককমাস হিসেবে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত এ মাসে ৪৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ শতাংশ এবং আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুনে ৩৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। আর গত জুনের জন্য লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এর আগে একক মাস হিসেবে সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে সর্বোচ্চ ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় এসেছিল। অর্থাৎ গত জুনে গত ডিসেম্বরের চেয়েও ৪ লাখ ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতই তৈরি পোশাক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে, যা মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৮১ শতাংশ। পোশাক খাতে গত অর্থবছরের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
পোশাক খাত ছাড়াও বেশ কয়েকটি খাত এবার রপ্তানিতে এক বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। হোম টেক্সটাইল খাত থেকে এবার রপ্তানি হয়েছে ১৬২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়া জাতীয় পণ্য রপ্তানিতে ৩২ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর সামগ্রিক রপ্তানি ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফলে মোট রপ্তানি ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের, যদিও এ খাতে ৩ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
