ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ৬৫১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে
সোহেল রহমান : চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে। গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার ৯০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ৬৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও চার বছর বাড়ছে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন এটি বাড়িয়ে সময়সীমা ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘এক্সিম ব্যাংক অব চায়না’র অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ’।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চার কারণে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। এগুলো হচ্ছেÑ ডলারের বিনিময় মূল্যহারের পরিবর্তন (১ ডলার=৮০.৫৭ টাকার পরিবর্তে ৮৬ টাকা নির্ধারণ); প্রাইস কন্টিনজেন্সি ৪% এর পরিবর্তে ৮% নির্ধারণ; বেতন-ভাতা, সম্মানী, আউটসোর্সিং কর্মী, পেট্রোল, লুব্রিকেন্ট, স্টেশনারি, যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ চার বছর বৃদ্ধি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের আর-এডিপি-তে মোট ৬৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।
সংশোধিত প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে এবং বৈদেশিক অর্থায়নের পরিমাণ কমেছে। মূল প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে মূল প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ বা অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৯২ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ২৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ কমছে।
এ বিষয়ে সূত্র জানায়, মূল ডিপিপি অনুযায়ী শতভাগ কমার্শিয়াল কন্ট্রাক্ট বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে সংস্থানের জন্য নির্ধারিত থাকলেও ঋণচুক্তি অনুযায়ী ৮৫ ভাগ কন্ট্রাক্ট বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে সংস্থানের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া, ঋণচুক্তিতে ডিপিপি’র ৩টি আইটেম (নিয়োগদাতার সুবিধাদি, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ভবন, রুট ক্লিয়ারেন্স) প্রকল্প ঋণের পরিবর্তে সরকারি অর্থে সম্পাদনের উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা জেলার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আশুলিয়া থানা ও সাভার উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সাভার ইপিজেডের সন্নিকটে শ্রীপুর হতে বাইপাইল-আশুলিয়া-আব্দুল্লাহপুর রোড হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ-পূর্বক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে যানজট নিরসন এবং দ্রæত, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সেতু বিভাগের অধীনে ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসডিজি-৯-এ আঞ্চলিক ও আন্ত:সীমান্ত অবকাঠামোর নির্মাণসহ মানসম্মত, নির্ভরযোগ্য টেকসই ও অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো বিনির্মাণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এবং প্রায় সকল জাতীয় মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার সাথে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং প্রকল্প এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ ৪০.৮৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন; ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ১০.৮৪ কিলোমিটার র্যাম্পস্ নির্মাণ; ১.৯২ কিলোমিটার ২-লেন নবীনগর ফ্লাইওভার নির্মাণ; ১৪.২৮ কিলোমিটার এ্যাটগ্রেড রোড পুনঃনির্মাণ (২- লেন+২-লেন সার্ভিস সড়কসহ); ২.৭২ কিলোমিটার ২-লেন ব্রিজ নির্মাণ; ৫০০ মিটার ওভারপাস/ফ্লাইওভার নির্মাণ; ইউটিলিটির জন্য ১৮ কিলোমিটার ড্রেন/ডাক্ট নির্মাণ; ৪টি টোল প্লাজা নির্মাণ এবং ২,৭৯৮ জনমাস পরামর্শক সেবা ক্রয়।