অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ে ভারসাম্যহীন দেশের অর্থনীতি
এম. মোশাররফ হোসাইন : করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ধস, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা, ডলারের বিপরীতে দফায় দফায় টাকার পতন, সর্বোপরি আমদানি ব্যয় অব্যাহত বৃদ্ধিতে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি।
দেশে পণ্য আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে সাত হাজার ৩৪৩ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি। এই সময়ে পরিমাণের দিক দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ কম।
অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবিলায় টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধনের নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী বাবদ ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কাটছাটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ফলে এডিপি থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৬৮ ধরনের পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৩ থেকে ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপ করা হয়েছে।
রপ্তানি প্রথমবারের মত এক অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর মাইলফলকে পৌঁছানোর সুসংবাদ বিপুল আমদানির তথ্যে ¤øান হয়ে গেছে; কেননা বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি মে শেষে প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
সোমবার জুলাই থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত আমদানি ব্যয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এবং রেমিটেন্সে নেতিবাচক ধারা বজায় থাকায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ (১০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার)। আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ে যা ছিল ২০ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
এর প্রভাবে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও ১৭ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পার করেছে, যেটিও ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এক মাস আগেও এপ্রিল শেষে যা ছিল ১৫ দশামিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।
আর গত বছরের মে থেকে এক বছরের ব্যবধানে চলতি হিসাবের এ ঘাটতি ৬ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের মে মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) চলতি হিসাবে বাংলাদেশের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ২৭৮ কোটি ডলার। এর মানে ঘাটতি বেড়েছে ৬ গুণের বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩৯ শতাংশ বেশি। এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৪ হাজার ৪৫৮ কোটি ডলার।
এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৮২ কোটি ডলার। এ সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ। এক মাসে আগে এপ্রিলে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। অপরদিকে মে শেষে রপ্তানি আয় এসেছে ৪৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের মে মাসের তুলনায় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এরপর পৃষ্ঠা ২, সারি ৩