সমাপ্ত অর্থবছরে টিসিবি’র লোকসান ১,১৫৮ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি)-এর লোকসান অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়েছে ৫২৩ শতাংশ। জনসাধারণের মধ্যে স্বল্প মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী বিক্রি করাই এ প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ।
মূলত: বাজার দর অনুযায়ী পণ্য কিনে তা স্বল্প মূল্য বিক্রি করার কারণে টিসিবি অনেক সময় লোকসান দিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে লোকসানের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিশেষত: সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে টিসিবি রেকর্ড পরিমাণ লোকসান দিয়েছে। এ বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টিসিবি বরাবর চিঠি পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে টিসিবি’র লোকসান দিয়েছে ১৮৬ কোটি ২ লাখ টাকা। এর পরের বছর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু এরপর ২০২১-২০২২ অর্থবছরের লোকসানের পরিমাণ প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। লোকসানের এ হিসাব ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ২৩ মে পর্যন্ত। দেখা যায় যে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়েছে ৯৭২ কোটি ৭ লাখ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র মতে, টিসিবি মূলত: জনসাধারণের মধ্যে স্বল্প মূল্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়কারী একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের মাধ্যমে টিসিবি বাজার দরে তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ আরও কিছু পণ্য ক্রয় করে থাকে।
কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পণ্যগুলোই আবার কম দামে জনসাধারণের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এ কারণে টিসিবি-কে লোকসান গুনতে হয়। গত বছরে টিসিবি’র আওতায় বাড়িয়ে অনেক মানুষকে স্বল্প মূল্যে পণ্য দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১ কোটি পরিবারকে এর আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা হয়েছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে।
জানা যায়, টিসিবি’র লোকসানের অর্থ পুনর্ভরণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, টিসিবি সবসময় যে লোকসান করে তা নয়। অনেক বছর তারা মুনাফাও করেছে। টিসিবি’র আর্থিক চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সংস্থাটি ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। কিন্তু এর পরের ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আবার মুনাফা দেখিয়েছে ৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরের দুই অর্থবছরেও টিসিবি মুনাফা করেছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মুনাফা ছিল ৫৬ কোটি টাকা এবং পরে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর পরের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।