বৈদেশিক ঋণ ও রেমিটেন্সের দিকে নজর দিতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশে বৈদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আইএমএফ থেকে কমপক্ষে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে হচ্ছে অর্থনেতিক সক্ষমতা কমে যাওয়া। সর্বশেষ রপ্তানি ব্যয় পরিশোধের পর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩৯.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় নিস্পত্তির পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ ছিলো ৪৬.১৫ বিলিয়ন ডলার।
গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো রিজার্ভের পরিমান ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেল। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। ওই বছরের জুন মাসের শেষে রিজার্ভের পরিমান ছিলো ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার। গত বছরে আগস্টে প্রথমবারের মত রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর কমতে থাকে। গত অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন রিজার্ভ ছিলো ৪১.৮৬ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, সেই অনুপাতে রপ্তানি না বাড়া, রেমিটেন্স কমে যাওয়া এবং ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন- প্রভৃতি কারণে রিজার্ভ কমে গেছে। আর জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় আরও বেড়ে গেলে রিজার্ভে টান বাড়তেই থাকবে। সাধারণভাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকার কথা বলা হলেও রিজার্ভ কমে যাওয়া অর্থনৈতিক শক্তি কমে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে।
বাংলাদেশের এখনো পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেও তাতে আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমতে থাকলে রিজার্ভও কমতে থাকবে। একই সঙ্গে প্রবাসি আয় কমতে থাকলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। বাংলাদেশকে গড়ে মাসে এখন সাত মিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বলব না যে আমরা একেবারে সংকটের মধ্যে আছি। ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রিজার্ভ মানে হচ্ছে ছয় মাসের মতো রপ্তানি ব্যয় মেটানো যাবে। তিন-চার মাসের থাকলেই চলে। তবে এখানে আশঙ্কার বিষয় হলো রিজার্ভ দ্রæত কমে গেছে।”
বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। গত অর্থ বছরের জুলাই থেকে মে ১১ মাসে আমদানি হয়েছে ৭৫.৭ বিলিয়ন ডলারের। যা আগের তুলনায় ৩৯% বেশি। একই সময়ের মধ্যে ৩৩% বেড়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৪.৪২ বিলিয়ন ডলারের। এই প্রথমবারে মত প্রবাসী আয়ও কমেছে।
গত অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছে দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার। আর তার আগের অর্থ বছরে রেমিটেন্স আসে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
ড. সালেহ উদ্দিন মনে করেন, “এখন যে রিজার্ভের হিসাব দেখানো হচ্ছে তার মধ্যে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) আছে। এটা তো রিজার্ভ থেকেই দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সাত বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়ে গেছে। সেটা কি ফেরত এসেছে? না আসলে সেই ডলার তো আর রিজার্ভে নেই।”
আরো একটি সমস্যা হলো টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় পেমেন্ট রেট আরো বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মীর্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, “আশঙ্কার বিষয় না থাকলেও দ্রæতই রিজার্ভ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি কমাতে হবে। বিশেষ করে বিলাসপণ্যের। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে। কিন্তু সেটা কতটা কার্যকর হচ্ছে দেখা দরকার। রপ্তানি বাড়াতে হবে।
আর রেমিটেন্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। কার্ব মার্কেটে তো ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে বেশি। তাই সব রেমিটেন্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।” এরপর পৃষ্ঠা ২, সারি ৩