এম. মোশাররফ হোসাইন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড হারে দফায় দফায় দরপতন ঘটছে ভারতীয় রুপির। ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের চার মাসে ২৬ বার রুপির পতন হয়েছে। আর এরই সঙ্গে সর্বকালের সর্বনি¤œ মানে পৌঁছালো রুপি।
বুধবার এক ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দাম দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৮১, যা সর্বকালের সর্বনি¤œ রেকর্ড।
একদিকে ধারাবাহিকভাবে কমছে ভারতীয় রুপির দাম। অন্যদিকে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। ডলারের এমন মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যের কারণ খুঁজতে এরই মধ্যে ভারতের আর্থিক মহলে শুরু হয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ।
এদিকে গত বছরের তুলনায় ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯.১ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ৪০ বছরে এটা সর্বোচ্চ।
ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রুপির এই দরপতনের নেপথ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ ছাড়াও একাধিক বাহ্যিক কারণ থাকতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবও আছে বলে মনে করছেন তারা।
ভারতে চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতি, স্টক ও বন্ড বাজার ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এর ফলে আমদানির তুলনায় বিনিয়োগ কমছে। শুধু ভারত নয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা বদলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সংকটের কারণে প্রায় চার থেকে সাত শতাংশ পতন ঘটেছে মুদ্রার। আর সেটি প্রভাবিত করেছে সামগ্রিক অর্থবাজারকে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ দরপতন ৮০-তে থাকলেও সামনে আরও নিচে নেমে যেতে পারে। এরই মধ্যে ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ৪০ বছরে এটা সর্বোচ্চ। আরও বড় সংকটে পড়তে পারে বলে তাদের দাবি।
বর্তমান জ্বালানি সংকটে দেশের চাহিদা ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এই জ্বালানিতে প্রভাব পড়েছে। খুব শিগগিরই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান এই বিশেষজ্ঞরা। রুপির এ পতন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। আমদানিকৃত সোনার ওপর উচ্চহারে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, বিক্রি করা হচ্ছে গচ্ছিত ডলার। কিন্তু লাগাম টানতে পারছে না রুপির দরপতন। তবে শুধু ভারতীয় মুদ্রা নয়, ইউরোসহ বিশ্বের অন্য দেশের মুদ্রার দামেও লাগাতার পতন ঘটেছে। এক দিন ডলারের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে আসছিল ইউরো, বুধবার তাতেও ছেদ পড়েছে। গত ২০ বছরে এই প্রথম ডলারের থেকে নীচে নেমে গিয়েছে ইউরোর দাম। প্রতি ডলারে ইউরোর দাম এসে ঠেকেছে ০.৯৯৯৮-তে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছ ইউরোপ। তারই ফলশ্রæতি হিসেবে ইউরোর এই পতন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে খাদ্যপণ্য থেকে জ্বালানি, সবকিছুর দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সূত্র : এনডিটিভি