হলমার্ক ও ডায়মন্ড নীতিমালা প্রণয়নের দাবি বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ পাচার হয় ধারনা বাজুসের
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিদিন অবৈধভাবে ২০০ কোটি টাকার সোনা আসছে দেশে। এই হিসেবে বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকার সোনা আসে। যার পুরোটাই প্রতিবেশি দেশগুলোতে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং অ্যান্ড ল’ এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান এনামুল হক খান দোলন। সারা দেশে জুয়েলারি শিল্পের বাজারে অস্থিরতা, চলমান সংকট ও সমস্যা, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধ এবং কাস্টমসসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযানের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এনামুল হক খান বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সোনা পাচার হওয়ায় বড় অংকের ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের ডলার সংকটের এটা অন্যতম কারণ বলেও মনে করে এ সংগঠনটি।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফলশ্রæতিতে বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চরম আঘাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত। দেশে দেশে মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরই প্রভাব পড়েছে সোনার বিশ্ববাজারে।
সংবাদ সম্মেলনে বাজুস বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবগুলো হলো- সোনা চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। পাশাপাশি চোরাকারবারিদের দমনে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন করা। ব্যাগেজ রুলের আওতায় সোনার বার ও অলংকার আনার সুবিধা অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট ও চোরাচালানে কী প্রভাব পড়ছে, তা জানতে বাজুসকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব করেছে বাজুস।
সারাদেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও জানান হয়, সাম্প্রতিক সময়ে অব্যাহতভাবে মার্কিন ডলারের মাত্রাতিরিক্ত দাম ও সঙ্কটসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী দাম এবং বেপরোয়া চোরাচালানের ফলে বহুমুখি সঙ্কটে পড়েছে দেশের জুয়েলারি শিল্প। দেশে মার্কিন ডলারের দাম ১১৮ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি- বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে প্রতিনিয়ত স্থানীয় পোদ্দার বা বুলিয়ন বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হচ্ছে। পোদ্দারদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এই চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সকল আইন- প্রয়োগকারি সংস্থা সমূহের জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাজুসে পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ যে সোনা চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এটা কথার কথা নয়। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই পরিস্থিতি উত্তোরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি বাজুসকে সম্পৃক্ত করে আইন প্রয়োগকারি সকল দপ্তরের সমন্বয়ে সোনা চোরাচালান বিরোধী সেল গঠন করতে হবে। এছাড়া চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা সমূহের সদস্যদের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থা সমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের দাবি করা হয়।
গহনার মান উন্নয়নে হলমার্ক নীতিমালা ও ডায়মন্ড নীতিমালা প্রণয়নে সরকারের কাছে জোড়ালো দাবি জানাচ্ছে বাজুস। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং এন্ড ল এনফোর্সমেন্ট। আমরা বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এন্টি স্মাগলিং এন্ড ল এনফোর্সমেন্টের পক্ষ থেকে সোনা ও ডায়মন্ডের অবৈধ হলমার্ক ব্যতীত কোন অলংকার বিক্রয় করার আহŸান জানান। যদি কোন জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানে হলমার্ককৃত অলংকার নি¤œমানের পাওয়া যায় তাহলে যে প্রতিষ্ঠান উক্ত অলংকার হলমার্ক করেছে সে প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করবে বাজুস।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে স্বর্ণের ৪টি মান রয়েছে, যথাক্রমে ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ (৯৯ দশমিক ৫)। এই মানের নীচে কোন স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকার বিক্রি করা যাবে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে তেজাবী (পাকা সোনা বা পিউর গোল্ড) স্বর্ণের ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ৯৯ দশমিক ৫ এর নীচে মান গ্রহণযোগ্য না। এক্ষেত্রে সকল হলমাকিং কোম্পানীকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী স্বর্ণ পরীক্ষা করারও অনুরোধ জানান।