রক্তমাখা জনকের উত্থান
অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শাসুল হক লিখেছেন, এখনো রক্তের রঙ ভোরের আকাশে/পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে/কবে থেকে ভাসছে বাতাসে/অপেক্ষায়- শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর- আরো একবার/জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার/পাখায় পড়বে এসে/ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে/মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই, তাই ওঠে নড়ে/থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে/পাতাগুলো হাওয়া পায়,শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও/ধরে ওঠে অস্থিরতা- কখন সে পাবে স্বর-জয় বাংলা ঝড়- তাকে দাও/জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও/অভিভূত রক্ত যায় ঝরে/বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে/স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী/তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয়/রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়!
‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’Ñএটা সবসময়ের জন্যই সত্যবাণী। পৃথিবীর দেশে দেশে বহু কীর্তিমান জন্মেছেন। দেশের জন্য তারা কাজ করেছেন। কাজের মাধ্যমেই মানুষের মনের মণিকোঠায় ঠাই করে নিয়েছেন। কীর্তিমানদের আসলে মৃত্যু নেই। কর্মের কারণে তারা মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকেন। কর্মই তাদের অমর করে রাখে। তারা চিরঞ্জীব।
বাংলাদেশ বীরসন্তানদের দেশ। এ দেশেও বহু বীর সন্তান জন্মেছেন। দেশকে ভালোবেসে কাজ করে গেছেন। মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন জীবনভর। এতে কোনো দ্বিধা, সংশয় ছিলো না। এই বঙ্গের হাজারও বীর বাঙালি সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নামÑটুঙ্গিপাড়ার খোকা। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানÑ আমাদের জন্য বড় এক আশীর্বাদের নাম। তার জন্ম বাঙালিকে শত বছরের পরাধীনতার শিকল ভাঙতে উদ্বুদ্ধ করেছে। শক্রকে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে এনেছে। একথা তো আজ দিবালোকের মতো সত্য, বঙ্গবন্ধুর জন্মেছেন বলেই বঙ্গভূমি শোষকমুক্ত হয়েছে।
ব্রিটিশরা একসময় উপমহাদেশ শাসন করেছে। শোষণ করেছে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষ লড়াই করে অধিকার ফিরে পেয়েছে। বাঙালিরাও সবসময় লড়াই-সংগ্রাম করে করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ভাষার জন্য বাঙালি লড়াই করেছে। জয়ী হয়েছে। মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানিরা শত চেষ্টা করেও বাঙালিদের কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তানিরা আমাদের পদে পদে ঠকিয়েছে। বারবার। আমরাও বারবার সংগ্রাম করেছি। লড়ে গেছি। শোষকেরা বাঙালিদের পরাজিত করতে পারেনি। আমাদের বন্ধু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরে ডাকে বাঙালি আপনা ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছিলো। গর্জে ওঠেছিলো। এর ফলে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলো। রুখতে পারেনি পাক হানাদার বাহিনী। বোমা, বন্দুকের গুলিও বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পাকিস্তানিরা চেষ্টা করেও স্বাধীনতার মহানায়ককে আটকে রাখতে পারেনি। ফাঁসিতে ঝুলাতে চেয়েও সাহস করেনি। কবরও খুঁড়েছিলো, কিন্তু মুজিবকে টলাতে পারেনি। নিপীড়িত মানুষের নেতাÑ বিশ^নেতা জাতির জনককে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলো পাকিস্তানিরা। কিন্তু নিয়মিতর কী নির্মম পরিহাসÑ পাকিস্তানি শাসকেরা যেখানে সাহস করেনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সেখানে তার প্রিয় স্বদেশের কিছু বর্বর জাতির জনককে হত্যা করলো! যে দেশের মানুষকে তিনি হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন, তাকেই হত্যা করলো তারা! যার নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হলো, পাকিস্তানিরা পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলো, তাকে পারলাম এমনভাবে মারতে আমরা? এমন অকৃতজ্ঞ জাতি কি পৃথিবীতে আর একটিও আছে?
স্বাধীনতার পর আমাদের অনেক সংকট দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু শক্ত হাতে হাল ধরেন। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব বিষয়ে যে দিকনির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, এখনো তা চলছে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলেই দেশ একটি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তখন না ছিলো প্রশাসন, না ছিলো অর্থনীতি, না ছিলো নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশও সংগঠিত ছিলো না। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা অবস্থা বিরাজ করছিলো। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো একেবারে ভঙুর। সারাদেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-পুল-কালভার্ট ছিলো বিধ্বস্ত। একটা সূচনীয় অবস্থা ছিলো তখন। এরকম একটা দুর্দশাগ্রস্ত দেশকে গঠন করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন জাতির জনক। দায়িত্ব পেয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। দেশে তখন কোনো শাসনতন্ত্র ছিলো না। প্রথমে তিনি শাসনতন্ত্র রচনা করেন। তারপর ধীরে ধীরে সব জায়গায় হাত দেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেন। এর ফল এখন আমরা পাচ্ছি। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। তিনি এমন কোনো অংশ নেই, যেখানে তিনি হাত দেননি। সব জায়গার সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছিলেন। সময় পাননি বেশি। মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পান তিনি।
ঘাতকেরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সপরিবারে। শহীদ হন জাতির জনক। অনেক কিছুই সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তবে তার জীবিত কন্যা শেখ হাসিনা তার সকল স্বপ্ন পূরণ করছেন এক এক করে। কারণ বঙ্গবন্ধুর রক্তই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধমনীতে বিরাজ করছে। জনগণ তাকে আস্থায় নিয়েছে। ভরসা করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণ তার সফল পেয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হবেই। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।
লেখক : চিকিৎসক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিস্ময়!