
দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পাম তেলের দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ
অর্থনীতি ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে দরপতন অব্যাহত থাকলেও দেশীয় বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম। মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে দেশে পাম তেলের দাম ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। হঠাৎ করে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানিকারকরা গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দুইমাসের বেশি সময় ধরে দরপতন অব্যাহত থাকলেও দেশীয় বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পাম তেলের দাম মণপ্রতি (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রোববার প্রতিমণ পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকা দামে। যা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেও (১ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত) বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়।
ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে পরিবহন ভাড়া ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল পাম অয়েলের।
দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ডিজিএম প্রদীপ করণ বলেন, বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম কমেছে সত্য। কিন্তু সেই সুফল আমরা ঘরে তুলতে পারছি না। কারণ বর্তমানে বাজারে যেসব তেল বিক্রি হচ্ছে, তা আগের দামে কেনা। তার ওপর দেড় থেকে দুই মাস আগে বুকিং করা এসব পণ্যের আমদানি মূল্য এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রতি ডলারে আগের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি দামে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়তি পণ্য পরিবহন ভাড়া যোগ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তাই আগের চেয়ে দাম কিছুটা বেড়েছে, যোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক বলেন, ডলার সংকট ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে ভোজ্যতেলসহ প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে তা ঠিক। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পাম তেলসহ আরও কয়েকটি পণ্যের দাম অস্থির হয়ে উঠছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে খাতুনগঞ্জে কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে কিংবা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে, তখন বাজারে ওই পণ্যের বেচা-কেনা বেড়ে যায়। তবে ওই সময় পণ্যের যোগানে তেমন পরিবর্তন আসে না। কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে এসও (সেলস অর্ডার) হাত বদল হয় বেশি। এই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কারণেই মূলত পাম তেলের বাজার বেশি অস্থির হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং দর ও অন্যান্য বাড়তি খরচ যোগ করার পরেও দেশীয় বাজারের এই দাম খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও মেসার্স ইসমাইল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে দেশের বাজারে পৌঁছাতে প্রতিমণ পাম তেলের খরচ (পরিবহন ও রিফাইনিং খরচসহ) পড়ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ডলার সংকট ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগে পণ্যটির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে চারমাস ধরে টানা নিম্নমুখী রয়েছে পাম তেলের দাম। ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, রোববার বিশ্বাবাজারে প্রতিমণ পাম তেল বুকিং হয়েছে ৯৫৪ ডলারে। যা মার্চে ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৭৬ ডলার। সেই হিসেবে, গত চারমাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের বুকিং দর কমেছে মণপ্রতি ৮২২ ডলার।
তবে পাম তেলের বাজার অস্থির হলেও দীর্ঘদিন ধরে স্থির রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার টাকা দামে। সূত্র : টিবিএস বাংলা অনলাইন
