সৌদি, ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছয় মাসে সর্বনিম্ন
রাশিদুল ইসলাম : গত জানুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম। অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্যমতে, মঙ্গলবার ডব্লিউটিআইয়ের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৮৬ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলারে পৌঁছায়, যা আগের দিনের তুলনায় ৩ দশমিক ২৮ ডলার বা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো তেল উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে, সৌদি আরবের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি আরামকো প্রতিদিন ১২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমনকি ইরাক তেল উৎপাদনে অগ্রসর হচ্ছে। এধরনের বিনিয়োগ তেলের বাজারে প্রভাব ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চীনে তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় তা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরের ওপর সহজেই প্রভাব ফেলেছে। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় দেশটির ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে তেল উৎপাদনকারী এ দেশটি বৈধভাবে অবাধ তেল রপ্তানি শুরু করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর আরো কমতে পারে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবে সম্মত হতে পারলে ইরানি তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে।
একই সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৯৮ ডলার বা ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ কমে ৯২ দশমিক ১২ ডলারে নেমেছে যা গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন। ফুজিটোমি সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান বিশ্লেষক কাজুহিকো সাইতো রয়টার্সকে বলেন, টানা দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাসোলিনের মজুত কমে যাওয়ায় তা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে যে, চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। বৈশ্বিক মন্দার উদ্বেগের কারণে তেলের বাজারে চাহিদা নিয়ে এমন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেল ও জ্বালানির মজুদ কমেছে। দেশটিতে অপরিশোধিত তেলের মজুত প্রায় ৪ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল কমেছে। গ্যাসোলিনের মজুত কমেছে প্রায় ৪৫ লাখ ব্যারেল। পাতনের মজুতও কমেছে অন্তত ৭ লাখ ৫৯ হাজার ব্যারেল। এ অবস্থায় বারক্লেসের পূর্বাভাসে ২০২২ ও ২০২৩ সালের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের সম্ভাব্য দাম ব্যারেলপ্রতি আরও আট ডলার কমানো হয়েছে। রুশ তেলের ‘স্থিতিস্থাপক’ সরবরাহের কারণে নিকট ভবিষ্যতে অপরিশোধিত তেলের বড় উদ্বৃত্ত তৈরি হবে বলে আশা করছে বহুজাতিক ব্যাংকটি। এদিকে ইরাক দিনে ৮ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আরামকোর সিইও আমিন নাসের বলেছেন তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যে পরিমান বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল বিশে^ তা ঘটেনি। মহামারীর পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান উত্তেজনা সে আশায় অনেকটা ভাটার সৃষ্টি করেছে।