যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ১৪ বছরে সর্বোচ্চ
রাশিদ রিয়াজ : ২০০৮ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ দরে উঠেছে। মঙ্গলবার প্রাকৃতিক গ্যাসের দর ৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট ৯.৩৩ ডলারে উঠেছে। এ বন্ধ হয়েছে, যা ১ আগস্ট, ২০০৮ এর পর থেকে সর্বোচ্চ সমাপনী মূল্য। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত জুনের শেষের পর প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ২০২০ সালের জুনে ১.৪৮ ডলার মূল্য থেকে তা বিস্ময়করভাবে ৫২৫ শতাংশ বেড়েছে। সিএনএন
আবহাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এয়ারকুলার ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মিজুহো সিকিউরিটিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট রবার্ট ইয়াওগার বলেন, গরমে আমাদের সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ফলে স্বাভাবিকভাবে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শীতে বাড়ি গরম ও গরমে ঠাণ্ডা রাখার অন্যতম উপাদান হচ্ছে গ্যাস। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে শীত বা গরম কত চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এদিকে টরটইজ ক্যাপিটলের উপদেষ্টা সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার রব থাম্মেল বলেন ইউরোপের অবস্থা ভিন্ন। ইউরোপের দেশগুলো এমনিতেই গ্যাস সংকটে ভুগছে। যুক্তরাষ্ট্রে তেমন সংকট বিরাজ করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইউরোপে গ্যাসের দাম ৭ গুণ বেশি বিরাজ করছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যার ফলে ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রফতানি বন্ধ রয়েছে। ইউরোপিও ইউনিয়ন গ্যাস সরবরাহে রেশনিং চালুর পর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা ও গৃহস্থালীর ওপর। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে মন্দা দেখা দিয়েছে। মন্দার কারণে আবার তেলের চাহিদা কমছে। চীনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শিল্পকলকারখানায় কর্মীদের ছুটি দেওয়ায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এ কারণেই দেশটিতে তেলের চাহিদা কমছে। যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে। এমনকি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে সাথে, তেলের দাম কমে গেছে, যা পেট্রলের দাম দ্রুত কমিয়ে আনতে সাহায্য করছে।
তবে ইউরোপে গ্যাস সংকট যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে। কারণ এলএনজির চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস এখন গ্লোবাল কমোডিটি বা রপ্তানিযোগ্য পণ্য হয়ে উঠেছে। ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানির বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি যাচ্ছে সেখানে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গ্যাসের ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় এর দাম চড়ে যাচ্ছে। সরবরাহ যোগানো সম্ভব হচ্ছে না। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ আগে থেকে কমে আসায় এ খাতে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গ্যাসের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তরা উৎসাহী হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ সম্ভব হলে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বর্তমান চড়া মূল্যের অর্ধেকে নেমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। তবে খুব কম মানুষই বিশ^াস করে গ্যাসের দাম এত তাড়াতাড়ি নেমে আসবে।