পতেঙ্গা সৈকত উন্মুক্তই থাকছে
অর্থনীতি ডেস্ক : পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে প্রস্তাবিত পর্যটন জোনের কিছু বিষয় নিয়ে আপত্তি ওঠার পর সেই পরিকল্পনায় কয়েকটি পরিবর্তন আনছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি বলছে, সৈকতের ছয় কিলোমিটার অংশ নিয়ে একটি জোন হবে, যা পুরো অংশই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে রাইড স্থাপন ও পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচ্ছন্নতায় নিয়োগ করা হবে অপারেটর। আর ব্যবস্থাপনা থাকবে সিডিএ’র হাতে।
এর আগে গত ডিসেম্বরে পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে পর্যটন জোনের দুই পাশে দেড় কিলোমিটার বেসরকারি অপারেটরের ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় সিডিএ। যেখানে টিকেট কেটে প্রবেশের প্রস্তাব ছিল। সৈকতের বাকি অংশ উন্মুক্ত রাখার কথা ছিল।
ওই ঘোষণার পরপরই ‘পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম’সহ কয়েকটি সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এর বিরোধিতা করে। পুরো সৈকত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি ওঠে। সবশেষ ১৩ অগাস্ট সংবাদ সম্মেলন করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি অপারেটরকে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। এরপর পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে পর্যটন জোন করার বিষয়ে আগের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা সরে এল সিডিএ। পুরো সৈকত উন্মুক্ত থাকার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “পতেঙ্গা সৈকত চট্টগ্রামে জনসমাগমের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত স্থান। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে এখানে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকেও পর্যটক আসবে।
“তখন বিশেষ করে ঈদ ও উৎসবের দিনগুলোতে ৫ লাখ মানুষ সমবেত হতে পারে। তাই এর সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সব সুযোগ সুবিধা রেখে এটিকে আমরা পর্যটন জোন হিসেবে সাজাতে চাই।”
পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “পতেঙ্গা সৈকতের পুরো ছয় কিলোমিটার অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোনো ধরনের টিকেটের ব্যবস্থা থাকবে না।”
গত ডিসেম্বরের পরিকল্পনায়, সৈকতের পতেঙ্গা অংশ থেকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার অংশ নিয়ে ‘পর্যটন জোন-১’ প্রস্তাব করা হয়েছিল।
শুরুতে এর মধ্যে ৭০০ মিটার অংশ এবং পরে আরও ৮০০ মিটার অংশ মিলিয়ে দুই ভাগে মোট দেড় কিলোমিটার অংশ টেন্ডারের মাধ্যমে বেসরকারি অপারেটরের হাতে দেওয়ার কথা ছিল, যেখানে প্রবেশে টিকেট লাগবে বলে সিডিএ’র প্রস্তাবে ছিল।
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “এখন সৈকতে যারা ঝুপড়ি দোকান করে, তাদের ১৫০ জনের ছবিসহ ডেটাবেজ করা হয়েছে। ফুড কোর্ট করে তাদের জন্য দোকান বরাদ্দ রাখা হবে। সৈকতে চেইঞ্জ রুম, ওয়াশরুম নেই; সেগুলো করা হবে।
“সৈকতে বাগান ও সাগরে সি রাইডের ব্যবস্থা থাকবে। কিছু রাইড ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বেসরকারি অপারেটের এসব রাইড ও অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিচ্ছন্নতাসহ রক্ষণাবেক্ষণ করবে।”
অপারেটর কত বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে প্রশ্ন করা হলে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “সেটা বিনিয়োগ প্রস্তাব দেখে নির্ধারণ করা হবে। কত বিনিয়োগ করবে তার উপর সময় নির্ধারণ হবে।
“এত বড় ওয়াকয়ে আমরা করেছি। কিন্তু এখন পর্যটকরা তা ব্যবহার করতে পারছেন না পরিচর্যা না থাকায়। সেখানে ঝুপড়ি দোকানের কারণে আবর্জনার ভাগাড় হয়েছে। এসব শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে যাতে সারারাত পর্যটকরা থাকতে পারেন। বেসরকারি অপারেটর তাদের লোকবল দিয়ে পরিচ্ছন্নতা ও অবকাঠামো দেখাশোনা করবে।”
সৈকতের বিপরীত দিকে আউটার রিং রোডের উপর গাড়ি রেখে সড়ক দখল করা হয় জানিয়ে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “ওই অংশে বড় গাড়ির জন্য একটি এবং টানেল সংলগ্ন অংশে ছোট গাড়ির আরেকটি পার্কিং জোন হবে। প্রতিটি ১০ একর জমি নিয়ে। রিং রোড অংশে ফুট ওভারপাস হবে। যাতে পার্কিং এ গাড়ি রেখে পর্যটকরা উপর দিয়ে হেঁটে সৈকতে পৌঁছাতে পারেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “উন্মুক্ত সৈকত পাবলিক স্পেস। আইনত তা সবার জন্য অবশ্যই উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখন সিডিএ যে পরিকল্পনার কথা বলছে সেটা যদি বাস্তবে হয়, তাহলে ঠিক আছে।
“সবার জন্য সৈকত উন্মুক্ত রাখা হলে আমরা বাধা দেব না। তবে অবশ্যই সৈকত ইজারা দেওয়া যাবে না। সৈকতে কেউ রাইড অপারেট করলে বা দোকান দিলে তা ঠিক আছে।”
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, “যে দ্বিমত উঠেছিল সেটার সাথে আমাদের এখনকার পরিকল্পনার কোনো ফারাক নেই। উনারা বলেছিলেন, সৈকত উন্মুক্ত রেখে বিনোদনের ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম সিডিএ’র নিয়ন্ত্রণে রেখে বেসরকারি খাতে পরিচালনার জন্য দেয়া যেতে পারে। আমরা সেটাই করছি। নতুন প্রস্তাব আমাদের সভায় অনুমোদনের পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সূত্র : বিডিনিউজ