অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ভূয়াপুরে পাট চাষীদের মুখে হাসি
তানভীর আহম্মেদ: আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও মাটি চাষাবাদের উপযুক্ত হবার কারণে চলতি মৌসুমে পাট চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছে টাংগাইল জেলার ভূয়াপুর উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা। ফলন ভলো হবার কারণে হাটে-বাজরে পাইকারদের কাছ থেকে পাট চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন, এতে করে তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তিরহাসি। একই সাথে ফিরতে শুরু করেছে সোনালী আঁশের সুদিন।
যদিও বৈরী আবহাওয়া এবং অনাবৃষ্টির দরুন পানি সংকটের কারণে পাটজাগ দেয়া নিয়ে চাষীদের সাময়িক অসুবিধায় পরতে হয়েছিল। পরবর্তীতে, সেচ পাম্পের সাহায্যে বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে এ সমস্যার সমাধান করেন তারা। যদিও এজন্য তাদের গুনতে হয়েছে বাড়তি অর্থ। তথাপি স্থানীয় হাট-বাজারে পাটের আশানুরুপ দাম পেয়ে খুশি এই উপজেলার পাট চাষীরা।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন্ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়া এবং অনাবৃষ্টির জন্য পানির সংকট হলেও চাষীরা তাদের জমিতে চাষ করা পাট কেটে নদী-নালাসহ এলাকার বিভিন্ন খাল, বিল ও ডোবায় পচনের জন্য জাগ দিয়ে রেখেছেন। অন্য দিকে নারী-পুরুষ উভয় সমানতালে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর জন্য একসাথে কাজ করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে পাট জাগ দেয়া থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়ানো, রোদে শুকানো এবং স্থানীয় হাট-বাজারে পাটের আঁশসহ পাঠকাঠি বিক্রি করা নিয়েঅত্যান্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন উপজেলার পাটচাষীরা।
উপজেলা কৃষিঅফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর মোটসাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে যা বিগত বছরের তুলনায় কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, চাষকৃত নানা প্রজাতির পাটের মধ্যে তোষা পাট অন্যতম। তবে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ও পানি সংকট থাকার কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কিছুটা দেরিতে পাট চাষ শুরু হলেও সেচ পাম্প ব্যবহার করে বিকল্প পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করায় শেষ পর্যন্ত পাটের ভলো ফলন পাওয়া সম্ভব হয়েছে। যদিও এতে পাট চাষীদের বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে কিন্তু হাটে-বাজরে পাটের ন্যাযমূল্য পাবার কারণে লোকসানের যে সম্ভবনা ছিলো তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়। সরেজমিনে ভূয়াপুর উপজেলার বিভিন্ন্ হাট-বাজার ঘুরে এবংপাইকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফলন ভালো হওয়ার কারণে বর্তমানে ভালো মানের পাট ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং নি¤œমানের পাট ৩ হাজার ২০০ টাকা প্রতিমণ হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিনে আরও জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পাট চাষে লাভ বেশী হওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
অপরদিকে উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ধুবলিয়া গ্রামের পাট চাষী মান্নান মিয়া এ প্রতিবেদকে জানান, মৌসুমের শুরুতে খরা ও অনা বৃষ্টির কারণে পানির সংকটে ছিলাম কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে প্রত্যাশিত পরিমান বৃষ্টি হওয়ার জন্য আশানুরুপ পাটের ফলন হয়েছে। এবছর ৬বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে লাভ বেশী হওয়ার কারণে আগামী মৌসুমে আরও অধিক পরিমান জমিতে পাট চাষ করবো বলে আমি আশাবাদী।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আমাদের অর্থনীতিকে জানান, এ মৌসুমে উপজেলার সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটচাষ করা হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশী। এছাড়া একই সাথে যমুনার চরাঞ্চলেও পাটের আবাদ প্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা পাট চাষীদের বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত ফলন বৃদ্ধি বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়াও পাটের ফলন যাতে স¦াভাবিক ফলন নিশ্চিত করতে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়তই মাঠ পর্যায়ে তাদের পরিদর্শন আব্যাহত রাখার পাশাপাশি কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।