রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে বিকল্প পন্থা প্রয়োজন
সোহেল রহমান : আগামী ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তীতে বাংলাদেশকে যে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হবে, তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির কাজে সহায়তার জন্য গঠিত বিষয়ভিত্তিক ৭টি সাব-কমিটির মধ্যে একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ক সাব-কমিটি।
শনিবার এ সাব-কমিটির উদ্যোগে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সাব-কমিটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহীতব্য কার্যক্রম সম্পর্কে যে খসড়া সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে। তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিকট উপস্থাপন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহিঃবিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা হারাবে এবং রপ্তানি পণ্যের জন্য পছন্দের সুযোগ কমে আসবে। তাই রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) কিংবা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে। তবে এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একইসঙ্গে রপ্তানিতে বর্তমানে প্রদত্ত নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকির মধ্যে যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বিধিবিধান এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে তার পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার পন্থা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।
জাতীয় কর্মশালায় কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের উপস্থাপনায় কর ব্যয় সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির উপরও বিশেষ জোর দেয়া হয়। রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের (যেমন- নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইন) ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা ও পণ্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।
ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ যে সকল সুপারিশ উপস্থাপন করে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ (১) যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিও-এর বাউন্ড ডিউটি হার সীমা অতিক্রম করেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার উক্ত সীমার মধ্যে নিয়ে আসা; (২) যেহেতু মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইস ব্যবস্থা ডব্লিউটিও এগ্রিমেন্ট অন কাস্টমস ভ্যালুয়েশন-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সেকারণে আলোচ্য মিনিমাম ইমপোর্ট প্রাইস-কে পর্যায়ক্রমে ফেইজ-আউট করা; এবং (৩) পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য প্যারা-ট্যারিফ এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা।
সাবসিডি বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের উপস্থাপনায় উল্লেখ করে যে, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে নগদ সহায়তা প্রদান করতে কোন অসুবিধা না হলেও উত্তরণ পরবর্তীতে শিল্প পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে উহা প্রদান করা যাবে না। এছাড়াও, বর্তমানে রপ্তানি প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রাপ্ত খাতসমূহে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের যে শর্ত রয়েছে তা বাদ দিতে হবে। এ স্টাডি গ্রুপ রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান করে না এমন একটি দেশের সংগে বাংলাদেশের রপ্তানি চিত্রের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা কম হবে। তবে, যেহেতু নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, সে কারণে বিকল্প কী ব্যবস্থা বা কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় তা এ স্টাডি গ্রুপ পর্যালোচনা করে দেখছে।