বাংলাদেশে যৌথ সামরিক কারখানা করতে চায় ভারত
অর্থনীতি ডেস্ক : সামরিক সহযোগিতা ও সরঞ্জাম সহায়তার বাইরে বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদিত সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র নিজেরা আমদানি করবে ভারত। এর মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতার বাইরে দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমাতে চায় দিল্লি।
বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা করতে চায় ভারত। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় দিল্লি। একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে এ কারখানা করতে চায় দেশটি।
সামরিক সহযোগিতা ও সরঞ্জাম সহায়তার বাইরে বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদিত সামরিক সরঞ্জাম ও যুদ্ধাস্ত্র নিজেরা আমদানি করবে ভারত। এর মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতার বাইরে দুই দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমাতে চায় দিল্লি। যৌথ এই সহযোগিতা উদ্যোগে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার, মর্টার, হালকা যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার, টর্পেডো এবং সাঁজোয়া যানের মতো সরঞ্জাম তৈরি করতে চায় ভারত।
দিল্লির সাউথ ব্লক ও একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেল জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততাকে সামনে রেখে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন নয়াদিল্লি সফরের সময় ভারত যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনে একটি কাঠামো চুক্তির জন্য জোর দিচ্ছে।
চীন সম্প্রতি কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি অতি-আধুনিক সাবমেরিন ঘাঁটি, বিএনএস শেখ হাসিনা নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি মূল প্রতিরক্ষা প্রকল্প ত্বরান্বিত করা শুরু করেছে। দিল্লি মনে করে, ভারতীয় উপমহাদেশে চীন তার প্রভাব সম্প্রসারণের জন্য বেইজিং ইশীমধ্যেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি সাবমেরিন দিয়েছে।
ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও অল ইন্ডিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌতম লাহিড়ী জানান, কিছুদিন আগে, ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব অজয় ??কুমার এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেলের নেতৃত্বে চতুর্থ ভারত-বাংলাদেশ বার্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপের সময় একটি আপগ্রেডেড দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির গ্রাউন্ড ওয়ার্ক চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
১১ আগস্ট নয়া দিল্লিতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে করা বৈঠকে যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, এটি প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা হার্ডওয়্যার এবং সরঞ্জাম উৎপাদনে ভারত ও বাংলাদেশ হাত মেলাতে পারে।
২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার কাঠামোতে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল। যা এ সফরের সময় আপগ্রেড করতে চাচ্ছে সাউথ ব্লক। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা সামগ্রীর যৌথ উৎপাদন নিয়ে আলোচনাও এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে উভয় দেশেরই প্রতিরক্ষা বাণিজ্যসহ-উন্নয়ন এবং যৌথ উৎপাদন সহযোগিতার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, উভয় দেশের সশস্ত্র বাহিনী একাধিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বর্ধিত সম্পৃক্ততা উভয় দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব আসন্ন ডিফ-এক্সপো ২০২২-এর জন্য তার বাংলাদেশি প্রতিপক্ষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা অক্টোবরে গুজরাটের গান্ধীনগরে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বহু-জাতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন ফোরামের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছেন এবং আরও সহযোগিতার জন্য বিশদ আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন।
বৈঠকে প্রতিরক্ষা শিল্প ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতার বিভিন্ন দিক বিস্তারিত আলোচনার জন্য এসেছে। উভয় পক্ষই প্রতিরক্ষা সংগ্রহের জন্য ভাতেরক প্রস্তাবিত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন বাস্তবায়নের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
বাংলাদেশ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের চাহিদা মতো আইটেমের তালিকা পাঠাতে সম্মত হয়েছে বলে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
আগস্টের আলাপচারিতার সময়, আলোচকরা দুই দেশের মধ্যে চলমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পর্যালোচনা করেন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা করোনার সময় নানা অসুবিধা সত্ত্বেও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান। প্রতিরক্ষা সচিব পর্যায়ের আলোচনার এক দিন আগে ১০ আগস্ট নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় ভারত-বাংলাদেশ ত্রি-সেবা স্টাফ আলোচনা (টিএসএসটি) অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ভারতের ডেপুটি চিফ অফ ইন্টিগ্রেটেড স্টাফ হেডকোয়ার্টার ব্রিগেডিয়ার বিবেক নারাং এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যান ডিরেক্টরেটের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার হুসেইন মুহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আলোচনাটি ‘তিনটি পরিষেবার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ব্যবস্থার পরিধির অধীনে গৃহীত চলমান এবং নতুন উদ্যোগ এবং দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যস্ততাকে আরও জোরদার করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
এ ছাড়া নিয়মিত সংলাপ ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সফরে ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২০১৯ সালে এ সংক্রান্ত চুক্তি করে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী সরঞ্জাম কিনতে ভারত ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে।
গত জুলাইয়ে ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ভারতের সেনাপ্রধান। সাক্ষাতে সরঞ্জাম কেনার বিষয়টি উঠে আসে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও ভারত গিয়ে সরঞ্জাম পরিদর্শন করে এসেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সূত্র : নিউজবাংলা