আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা বিদ্যমান ও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল
সোহেল রহমান : একদিকে বিদ্যমান কোভিড পরিস্থিতি। অন্যদিকে দেশের আর্থিক ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ থাকলেও বর্তমানে দেশের আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে অর্থ বিভাগের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ বলেছে, মধ্য মেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় অর্থনীতির চারটি প্রধান খাত তথা প্রকৃত, রাজস্ব, আর্থিক ও মুদ্রাখাত এবং বহিঃখাতের সূচকসমূহের প্রাক্কলন ও মধ্য মেয়াদী প্রক্ষেপণ করা এবং টেকসই ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ বিভাগ দেশের আর্থিক খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বছর দু’য়েক আগে অর্থ বিভাগের এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর মন্দাভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। কোভিডের কারণে সারাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ব্যহত হয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন। সেই সঙ্গে মানুষের আয় কমেছে, বেকারত্ব বেড়েছে ও নতুন দারিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে চাপের মুখে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রবণতা বেড়েছে। সেজন্য আগামীতে আর্থিক শৃঙ্খলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় একটি দক্ষ আর্থিক নীতি প্রণয়ন করা হবে।
এপিএ-তে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার (জিডিপি’র ৫.৩১ শতাংশ) ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা ও ভ্যাক্সিন সহায়তা বাবদ ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এছাড়া দেশে কর্মসংস্থান খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক-এর সঙ্গে সম্পাদিত তিন বছর মেয়াদী নীতি সহায়তা ঋণ কর্মসূচীর আওতায় তিন দফায় ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া গেছে।
এপিএ-তে অর্থ বিভাগের পর্যক্ষেণে যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছেÑ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর প্রক্ষেপণ প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন; নগদ ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক ঋণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো; আর্থ-ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আর্থ ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সরকারি ব্যয় যৌক্তিকীকরণ। এছাড়া কোভিড পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক করতে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নও একটি চ্যালেঞ্জ।
চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ রাজস্ব, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার নীতির সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে মধ্য মেয়াদী সামষ্টিক অর্থনীতি কাঠামো (এমটিবিএফ) হাল নাগাদ করা; বাজেট ঘাটতি জিডিপি’র ৫.৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রেখে সরকারি ঋণ ধারণক্ষমতা সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে বাজেট ডকুমেন্টের সঙ্গে দায়ের স্থিতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ।
এছাড়া অর্থ বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ দক্ষ আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা; সরকারি বাজেট ও হিসাবের নতুন শ্রেণীবিন্যাস কাঠামোর ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন; আইবাস ব্যবস্থার সম্প্রসারণ; সকল গ্রেডের কর্মচারিদের অন-লাইনে পেনশন প্রদান; ভবিষ্য তহবিল সম্পর্কিত হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি ও অন্যান্য আর্থিক সেবার মান উন্নয়ন ইত্যাদি।
অর্থ বিভাগ জানায়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন ২০১৯ অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারি কোষাগারে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিল।