বেনাপোল-যশোর ছয় লেনের সড়কে ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা
রহিদুল খান, যশোর : রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের গণমানুষের যোগাযোগ আরও সহজ করতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বেনাপোল থেকে নড়াইল হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সম্ভাব্য খরচ নির্ধারন করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে এতে অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও মাত্র ৯শ’ কোটি টাকা দিতে চেয়েছে ভারত।
এদিকে এ কাজের সম্পূর্ণ খরচ দিতে চায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এআইআইডি। এ ব্যাপারে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতনরা ভারতীয় হাইকমিশন এবং এশিয়ান ইকোনোমিক ইনভেস্টর (এআইআইডির) সাথে সংলাপ অব্যাহত রেখেছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে ভারত এবং এআইআইডি থেকে অর্থ ছাড় হবে এমনটি আশা করছে সওজ।
বেনাপোল রাস্তা থেকে যশোরের রাজারহাট হয়ে হামিদপুর থেকে নড়াইল রোডে মিলিয়ে তা নড়াইলের কালনা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত গিয়ে পদ্মা সেতুর সাথে সংযুক্ত করার ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের এই সময়োপযোগী পদক্ষেপে ঢাকার সাথে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ আরো সহজ হবে। পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পাবেন মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই ৬ লেনের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সরাসরি প্রস্তাবক।
ঢাকায় যেতে ফেরির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা পথ চেয়ে থাকা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি রোধে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। উদ্বোধনও করা হয়েছে গত ২৫ জুন। সরকারের ওই জননন্দিত কাজটির সাথে অনেকটাই পাল্টে গেছে এঅঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বানিজ্য যোগাযোগ। কিন্তু পদ্মাসেতুর সুফল পেতে যশোরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার জন্য অন্তরায় বেনাপোল যশোর নড়াইলের কালনা ভাঙ্গা পর্যন্ত দুই লেনের এই রাস্তা। এ কারণে হাতে নেয়া হয়েছে ছয় লেনের বিশাল প্রকল্প। সম্পন্ন করা হয়েছে নকশা তেরীর কাজ, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দাতা সংস্থার সাথে চলছে সংলাপ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রের দাবি, দেশের অতিব গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরের অবস্থানের কারণে যশোর-বেনাপোল ছয় লেন করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকেরা।
কমপক্ষে চার লেন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সময়ের প্রয়োজনে গাছ কেটে হলেও সড়কটি অধিকতর প্রশস্ত করার বাস্তবতাও ছিল। সড়কটি এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত করার উপযোগী করতে এবং আন্তর্জাতিক মানের স্থল বন্দরটিতে যানবাহনের ব্যাপক চাপের বিষয়টি বিবেচনা করে ছয় লেন ছিল সময়ের দাবি। গাছ রেখে রাস্তা বাড়ালে শত শত একর কৃষি জমি নষ্ট, কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ও শেকড়ের কারণে ভবিষ্যত ঝুঁকিপূর্ন হবে বলেও ওই সময় সার্ভেতে উঠে আসে। এরপরও পরিবেশবাদী জনগোষ্ঠী তথা মামলার কারণে গাছ রেখে দু’লেনের কার্যাদেশ দেয়া হয়। পরে বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত দুই লেন হয়। মূলত যশোর-বেনাপোল রোডের সেই ছয় লেন প্রস্তাবনার আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নতুন ছয় লেন কর্মযজ্ঞটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সরাসরি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন হিসেবে এই ছয় লেন এগুবে, সামনে কোনো বাধায় কাজে আসবে না।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, জমির পরিমাপ সীমানা এমনকি ছয় লেন রাস্তার ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অত্যাধুনিক এই ছয় লেন রাস্তায় অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। তবে দেশটি মাত্র ৯শ’ কোটি টাকা দিতে চায় বাংলাদেশকে। অথচ এই প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। এক হাজার মিলিয়ন ডলার, যা ভারতীয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি রুপির মত। এ নিয়ে দুই দিকেই সংলাপ চলছে। ভারতীয় হাই কমিশনের সাথে আলোচনা হচ্ছে। এক হাজার মিলিয়ন ডলার দিতে পারবে কি না আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে একটি ফলাফল দেবে ভারত। এছাড়া এআইআইডি এই খরচের সম্পূর্ণটাই বহন করতে চায়। তবে ভারত ফাইনাল না দিলে এআইইডির সাথে কোনো চুক্তিতে যাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এশিয়ান ইকোনোমিক ইনভেস্টর ও ভারত দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার যেটিই হোক আগামী ডিসেম্বরে ফাইনাল হবে। টাকা আসলেই একনেকে পাশ করে ছয় লেন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই ছয় লেনের রাস্তায় ব্যস্ততম জায়গায় ওভার ব্রিজ, রেল লাইন ও স্টেশন এলাকায় ফ্লাইওভার করা হবে। বড় বড় আরো কয়েকটি ব্রিজ করা হতে পারে। যাই হোক ছয় লেন কার্যক্রম শুরু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
সড়ক ও জনপথ যশোর সার্কেলের তত্ত্ববধায়ক আহমেদ শরীফ সজীব জানান, এটি সরকারের একটি জনবান্ধব মহাউদ্যোগ। যা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এগুচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উন্নয়ন কাজের স্বপ্নদ্রষ্টা। পদ্মা সেতুর পর এ অঞ্চলের জন্য আরো একটি বড় কাজ হবে এটি। এই মহাকর্মযজ্ঞে অর্থায়নে আগ্রহী দুটি পক্ষের সাথেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সংলাপ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষে নির্দেশনা আসবে যশোরে। বেনাপোল-যশোর-ঢাকা, মাগুরা-ঢাকা, ফরিদপুর-ঢাকা পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চাপ দেশের অন্য সব সড়ক মহাসড়কের তুলনায় সর্বাপেক্ষা বেশি। এজন্য এ রাস্তা দেশের অর্থনীতির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ এই মহা সড়ক বাস্তবায়ন হলে লাঘব হবে।