উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ এক ধরনের সমস্যা : আইআরডি
সোহেল রহমান : প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাকে এক ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে সংস্থার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি। এছাড়াও চারটি সমস্যা রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্ত:কর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।
জানা যায়, প্রতিবছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ বাস্তবতায় রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইআরডি। বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত তিনটি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।
আইআরডি’র তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আলোচ্য অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কাটছাঁট করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা (এনবিআর ৩,০০,৫০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ১২,৫৬৭ কোটি টাকা)। অর্থ বিভাগের হিসাবে, এর বিপরীতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (এনবিআর ২,৮০,০০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৯,৬০০ কোটি টাকা) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা (এনবিআর ২,১৮,৬১৬ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ৭,৩৪২ কোটি টাকা)।
বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হলেও ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি’-তে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ‘আইআরডি’। তবে কর ব্যবস্থাপনার অটোমেশন, সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং কোভিড-১৯ মহামারির বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কর ব্যবস্থাপনার গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখাটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। তবে সংস্থার হিসাবে, কর-জিডিপি অনুপাত বেড়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৫। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৩। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৯।
চলতি অর্থবছরে সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে ঘাটতি বাজেটে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন; অটোমেটেড সিস্টেমে ৫০ হাজার ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ; ৭ হাজার ইএফডি/এসডিসি মেশিন স্থাপন এবং ই-টিডিএস সিস্টেমে ৪ হাজার ৫০০ কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন সম্পন্ন করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আইআরডি।