যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ রপ্তানি বাংলাদেশের
অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশে নির্মিত ৬ হাজার ১০০ ডেডওয়েট টন ধারণ ক্ষমতা ও উচ্চগতি সম্পন্ন মাল্টিপারপাস কন্টেইনার জাহাজ যুক্তরাজ্যের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এনজিয়ান শিপিং কোম্পানি লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেটালে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। জাহাজটি তৈরি করেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাটের আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড সিøপওয়েজ লিমিটেড।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে জাহাজটি কারিগরিভাবে হস্তান্তর করা হয়। জাহাজটি ৩৬৪ ফুট লম্বা, প্রস্থে ৫৪ ফুট ও গভীরতা ২৭ ফুট। জাহাজটির ইঞ্জিনের ক্ষমতা ৪ হাজার ১৩০ হর্স পাওয়ার, গতি ১২.৫ নটিক্যাল মাইল ও ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ১০০ টন। এটি কন্টেইনার, ভারী স্টিলের কয়েল, খাদ্যশস্য, কাঠ, পাশাপাশি বিপজ্জনক মালামাল বহন করতে পারে। বাল্টিক সমুদ্রে সম্পূর্ণ বরফ আচ্ছাদিত অবস্থায় ৪ ফুট গভীর পানিতে চলতে পারবে। আনন্দ শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ বারী বলেন, আনন্দ শিপইয়ার্ড ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সোনারগাঁয়ের মেঘনাঘাটে আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করছে। ইয়ার্ডের বাৎসরিক উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার টন লোহা নির্মাণে ব্যবহৃত জাহাজ। এ দেশে আধুনিক জাহাজ নির্মাণের কলাকৌশল ও পদ্ধতি আনন্দ শিপইয়ার্ডই প্রচলন, পরিচিত ও প্রসারিত করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাহাজ নির্মাণশিল্প খাতকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করাসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করেছেন। তবে এটাও সত্য যে নদীমাতৃক পরিশ্রমী মানুষের বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ এক অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। দেশের সঠিক শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পারদর্শী কারিগর জনশক্তি তৈরির জন্য শিপইয়ার্ডের কোনো বিকল্প নেই।
শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান বলেন, জাহাজ নির্মাণে সর্বাধিক মানবশক্তির ব্যবহার হয়, আমাদের আছে ভালো আবহাওয়া, নদী, সমুদ্র উপকূল, বৃহৎ সমুদ্র এলাকা, তাই এই শিল্প বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ। জাহাজ রপ্তানি, জাহাজ পরিচালনা, ক্যাপ্টেন ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ক্রু সরবরাহ, দেশের শিপিং লাইনের জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র পরিবহন এবং দেশের উপকূলীয় এবং আভ্যন্তরীণ মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণশিল্প বাংলাদেশকে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দিয়ে থাকে। এই অঙ্ক ২০৪১ সালে ১০০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। ড. আবদুল্লাহ বারী বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাহাজ নির্মাণশিল্প খাতকে থ্রাস্ট সেক্টর ঘোষণা করে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জাহাজ নির্মাণ খাত বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ বৃহৎ এক্সপোর্ট বাসকেটে পরিণত হবে।
প্রসঙ্গত, আনন্দ শিপইয়ার্ড এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ক্রেতার কাছে ৩৫৬টি জলযান নির্মাণ করে সরবরাহ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে ডেনমার্কে অত্যাধুনিক কন্টেইনার জাহাজ ‘স্টেলা মেরিস’ রপ্তানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য জাহাজ রপ্তানির স্বর্ণদ্বার উন্মোচন করে ও বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়।
প্রতিষ্ঠানটি ডেনমার্ক, জার্মান, নরওয়ে ও মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশে জাহাজ রপ্তানি করছে। সবচেয়ে বড় আনন্দ শিপইয়ার্ডে একসঙ্গে ৮টি ১০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণের ভৌত সুবিধা আছে, একই সঙ্গে অন্যান্য অনেক ছোট আকারের নৌযান তৈরি করতে পারে। শিপইয়ার্ডের মোট ৯ লাখ বর্গফুট আয়তনের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট আচ্ছাদিত। এখানে বর্তমানে বৃহৎ আকারে ভেজার নির্মাণ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন জটিলতম কারিগরি বিনির্দেশিকার জাহাজ। অন্তত দেশের ১০টি শিপইয়ার্ড আধুনিক জাহাজ নির্মাণে সক্ষম এবং জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। সূত্র : সময়টিভি অনলাইন