সংসার চালাতে হিমশিম নিম্ন-মধ্যবৃত্তদের
মাসুদ মিয়া : অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। করোনায় মহামারি গত তিন বছরে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, অনেকের আয় কমেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে চাল, ডিম ও সবজির দাম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়। কলতাবাজারের বাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, পেঁপে শুধু ৩০, ঢ্যাঁড়শ- ৬০ টাকা পটল ৫০, চিচিঙ্গা-কাঁকরোল-উস্তা-ঝিঙা ৬০, আর বরবটি-বেগুন ৮০ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে এই সব সবজি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজিতে বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার থেকে বেড়েছে দাম। বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম। এজন্য না কি পাইকারি বাজার থেকে মোটামুটি সব সবজি ১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। শুধু সবজি নয়, বাজারে দেখা গেছে চাল ও ডিমের দামও বেশি। মোটা-সরু সব চালের দামই বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে স্বর্ণা ৫০-৫২ টাকা ও বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। অথচ এর আগে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা ৪৮-৫০ টাকা ও বিআর-২৮ এর দাম ছিল ৫৮-৬০ টাকা। এছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল। এসব চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮৪ টাকায়।
পাঁচভাই ঘাটলেন চাল ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এখন চালের সিজন (মৌসুম) শেষ। চাল আমদানি হলেও বাজারে সেগুলো আসছে না। এজন্য দাম বাড়তি।
তিনি আরও বলেন, মিলপর্যায়ে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০-১৫০ টাকার মতো বেড়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও মিলছে না চাহিদামতো চাল। মোকামে যে পরিমাণ চালের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বাজারে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ডিম ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৪০ টাকায় থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। সে সময় ডিমের ডজন ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে দেশে কখনো ডিমের দামের এতটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এখন আবার সেই পথে হাঁটছে পণ্যটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ডজন নিলে ১৪৫-১৫০ টাকা। যদিও কিছু কিছু বাজারে ডজনে ৫-১০ টাকা কম নিতে দেখা গেছে। তবে সে সংখ্যা খুব কম। লক্ষিবাজারের ডিম বিক্রেতা মুকুল বলেন, বুধবার থেকে ডিমের দাম হুট করে বেড়েছে। তার আগেও দুদিন বেড়েছে দাম। তবে সেটা ৫-৭ টাকা। শেষ বৃহস্পতিবার সকালে পাইকারিতে ডিমের ডজন ১৪০ টাকায় ঠেকেছে।
তিনি বলেন, পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা ৭০ পয়সা। যা অন্যান্য খরচ মিলে এখন সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডিমের সরবরাহ কম। সেজন্য দাম বেড়েছে। এদিকে মুদি পণ্যের দাম নতুন করে বাড়েনি বা কমেনি। আগের চড়া দামেই আটকে আছে। শুধু খুচরায় পাম তেলের দাম ৫ টাকা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বোতলজাত অন্য কোনো ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো কেজিপ্রতি ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ৩৫০-৪৬০ টাকা। আর ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কৈ মাছের কেজি। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি। মাছের মধ্যে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি ও ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০-১০০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা। গত সপ্তাহে এই দামে ছিল ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, যা গত সপ্তাহ এই একই দামে ছিল।
বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাড়তি দামে হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। রাজধানী লক্ষিবাজারের বাসিন্দা অনুপ হাওলাদার বলেন, দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও ইনকাম বাড়তেছে না। এদিকে রায়সাহেব বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগির ক্রেতা কলতাবাজারের বাসিন্দা খালেদা আক্তার বলেন, লাগামহীন ভাবে বাড়ছে নিত্যপন্যের দাম। এখন আরও যোগ হয়েছে চাল ডিম সবজির দাম, তাই সরকারের নিত্যপন্যের দামে দিকে নজর দিতে হবে।