অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে লোকসানের দাবি বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর
অর্থনীতি ডেস্ক : জ্বালানির দাম, বিভিন্ন ধরনের ফি ও সারচার্জ বাড়ানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের অসম প্রতিযোগিতা কারণে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো খুবই চাপে রয়েছে বলে দাবি এ খাতের উদ্যোক্তাদের।
আন্তর্জাতিক রুটের লাভ এবং অন্যান্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো বলেও তাদের ভাষ্য। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস শীর্ষক কর্মশালায় এমন দাবি করা হয়।
দেশি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় এওএবির সেক্রেটারি জেনারেল ও নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এই খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো নগদ প্রণোদনা চাইছে না। তাদের দাবি সরকারের গৃহীত নীতিগুলো যেন একটু ব্যবসাবান্ধব হয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা- বিমান যে নীতিগুলো নেয় তা যেন অনেকটা এই খাতের বেসরকারি প্রতিদ্ব›দ্বীদের চাপে ফেলার জন্য। বিমান তাদের সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে। দিন শেষে দেখা যাচ্ছে বিমানের যেই ইঞ্জিন পাঁচ হাজার ঘণ্টা চলার কথা তা আড়াই হাজার ঘণ্টার মাথাতেই ওভারহোলিং করতে হচ্ছে। একেকটি ওভারহোলিংয়ে ১৭ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার লাগে। তাদের এখন আধ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ দেনা। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের ধোঁয়া তুলে এ ধরনের বাহুল্য করার অবস্থা আমাদের আছে কী না তা ভাববার বিষয়। এ অভিযোগের বিষয়ে বিমানের বক্তব্য জানতে সংস্থাটির জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেননি। বরং বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বেসরকারি এভিয়েশন খাতের সর্বত্রই সমস্যা- দাবি করে মফিজুর রহমান বলেন, জ্বালানির দাম বেড়ে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে ফ্লাইট পরিচালনা খরচের ৫০ শতাংশই এখন জ্বালানির পেছনে ঢালতে হয়। আর পৃথিবীর তাবৎ এয়ারপোর্টেই জ্বালানির একাধিক সরবরাহকারী থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে সরবরাহকারী একজনই। তার এমনই অবস্থা যে সকালে নাস্তা না পাঠালে তেলের গাড়িই আসে না।
উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ আনতে উচ্চ হারে কর দিতে হয়। একটি ইঞ্জিনের জন্য শুল্ক দিতে হয় ৮০ লাখ টাকা। জ্বালানি খরচ, অগ্রিম কর মিলিয়ে আমাদের ফ্লাইট পরিচালনায় এখন বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তার ভাষ্য, হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ফ্লাইটে সিটপ্রতি ক্ষতি হচ্ছে ২ হাজার ৬৩০ টাকা। এই হিসাবে ৮০ আসনের একটি ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষতি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা এখনও লাভজনক। আন্তর্জাতিক রুটের লাভ এবং অন্যান্য ব্যবসা থেকে টাকা এনে সেই ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করছে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো। কতোদিন এভাবে চলতে পারবো তা জানি না। মফিজুর রহমানের বক্তব্যে লোকসানের বিষয়টি বেশি উঠে এলেও দেশের বেসরকারি এভিয়েশন খাতের শীর্ষস্থানীয় অংশীদার ইউএস বাংলার পরিচালক লুৎফর রহমান বলছেন সম্ভাবনার কথা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস সাতটি অভ্যন্তরীণ ও ১১টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাচ্ছে। প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষ তাদের সেবা নিচ্ছেন। বছর শেষে যাত্রী সংস্থা দাঁড়াচ্ছে ১৮ লাখে।
২০২৩ সাল নাগাদ বেসরকারি খাত প্রতিদিন ৭ হাজার যাত্রী এবং বছর শেষে ২৫ লাখ যাত্রী পাওয়ার আশা করার কথা বলেন তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে দুটি এয়ারলাইন্সের ২২টি উড়োজাহাজ রয়েছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে উড়োজাহাজের সংখ্যা ৩৩টিতে উন্নীত করার কথা ভাবছেন তারা। এয়ারবাসের সুপরিসর উড়োজাহাজ যুক্ত করে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
ইউএস বাংলার এ পরিচালকও আন্তর্জাতিক রুটগুলো লাভজনক বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনিও বিমানের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে না পারার দাবি করেন। বিমান যে হারে ভাড়া নিচ্ছে ক্ষতি হলেও সেই হারে ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারাও, যোগ করেন তিনি। এ খাতের বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলম বলেন, এটা ভাবতে হবে প্রতি বছর বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো আমাদের দেশ থেকে কত হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায়। আমাদের দেশি এয়ারলাইন্সগুলো তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারলে সেই অর্থের একটা অংশ দেশেই রাখা সম্ভব হবে। সেজন্য সরকারকে নীতিগত সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। হেলিকপ্টার সেবা স¤প্রসারণ নিয়েও নানা বাধার কথা বলেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
এওএবির প্রেসিডেন্ট ও বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবাদানকারী সংস্থা স্কয়ার এয়ারের কর্নধার অঞ্জন চৌধুরী বলেন, দেশে সুউচ্চ স্থাপনার ওপরে হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গা বা এলিভেটেড হেলিপ্যাডের অনুমোদনের জন্য তিন বছর ধরে তারা যুদ্ধ করছেন। কিন্তু অদ্ভুত কিছু যুক্তি দিয়ে সরকার তা আটকে রেখেছে।তাদের যুক্তি যদি হেলিকপ্টারে মাদক পরিবহন করা হয় বা যদি সেটা ক্রাশ করে তাহলে কী হবে। এ ধরনের যদি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয় কী করে।
তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগী পরিবহনে হেলিকপ্টার খুবই কার্যকরী একটি মাধ্যম। এখন একজন রোগীকে হেলিকপ্টারে এনে যদি ঢাকা বিমানবন্দরে নামাতে হয় এরপর সেখান থেকে হাসপাতালে নিতে আরও দু ঘণ্টা লাগে তাহলে কী লাভ হল? এওএবির প্রেসিডেন্ট অঞ্জন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মনিটর পত্রিকার সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম, এ খাতের বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম। সূত্র : বিডিনিউজ