আগস্টে দুই পণ্য আমদানিতেই ব্যয় কমেছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার
অর্থনীতি ডেস্ক : গত আগস্ট মাসে জ্বালানী তেল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমেছে। সেইসঙ্গে ব্যয় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে। ব্যয় বাড়ার তালিকায় আছে সার, সিমেন্ট, মোটরযান ও স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো পণ্যও।
গত আগস্ট মাসে জ্বালানী তেল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমেছে। সেইসঙ্গে ব্যয় বেড়েছে চাল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে। ব্যয় বাড়ার তালিকায় আছে সার, সিমেন্ট, মোটর যান ও স্ক্র্যাপ ভেসেলের মতো পণ্যও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসের আমদানি খরচ হয়েছিল ৬.৭৯ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে সেটি কমে নেমে আসে ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ, আগের মাসের তুলনায় আগস্টে ১.৪১ বিলিয়ন ডলার আমদানি কমেছে। এই হ্রাসের পেছনে ৬৫ শতাংশ এর বেশি অবদান জ্বালানী তেল ও ক্যাপিটাল মেশিনারিজের।
জুলাই মাসে ক্রুড ও রিফাইন্ড জ্বালানী তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ১.১০ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে সেটি ৫৭.২ শতাংশ কমে খরচ হয়েছে ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার। জ্বালানী তেল ছাড়া বড় আকারের ব্যয় কমেছে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে। জুলাই মাসে এই খাতে খরচ হয়েছিল ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের মতো। আগস্টে সেটি ৫৫ শতাংশ কমে হয়েছে ২৭৬ মিলিয়ন ডলার।
শুধু খরচই নয়, নতুন করে আমদানি এলসি খোলাও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। জ্বালানী তেলের জন্য আগের মাসের তুলনায় আগস্টে এলসি খোলা কমেছে ৬০%। ক্যাপিটাল মেশিনারিজের আমদানি এলসি খোলা আগের মাসের ২১৯ মিলিয়ন ডলার থেকে ৩২% কমে ১৪৯ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগের তুলনায় জ্বালানী তেলের ব্যবহার কমিয়েছে। ফলে আমদানিও আগের তুলনায় কম করতে হচ্ছে। সবাই জ্বালানী তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হচ্ছে, এটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে জ্বালানীর অভাবে যদি ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে তো অবশ্যই সেদিকে নজর দিতে হবে।’
ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমা সবসময় নেতিবাচক অর্থ বহন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি হয়, তার একটি বড় অংশই গার্মেন্টস খাতে ব্যবহার হয়। এখন এই মেশিনারিজগুলো এনে যদি উৎপাদন বাড়ানো না হয়, তাহলে তো এগুলো আনার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। এর আগে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে, উৎপাদন কিন্তু সে পরিমাণ বাড়েনি। অনেক সময় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা ৩৪টি প্রধান প্রধান পণ্যের আমদানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গম, ভোজ্যতেল, কয়লাসহ ২০টি পণ্যের আমদানি ব্যয় কমেছে। এর মধ্যে গম আমদানিতে ব্যয় কমেছে ৫২%, মিল্ক ফুডে ২৩.৩%, রিফাইন্ড এডিবল ওয়েলে ৪০%, ক্রুড এডিবল ওয়েলে ৪৮%, বিপি শিট ৭৭% এবং কম্পিউটার ও আইটি একসেসরিজে ৩৯%।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিলাসবহুল দ্রব্যে ১০০% মার্জিন রাখাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে আমদানি ব্যয়। ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানির এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট করতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। এর ফলে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার কিছুটা হলেও কমছে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জুলাইয়ের তুলনায় ১৪টি পণ্য আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে আগস্টে।
সবচেয়ে বেশি ব্যয় বেড়েছে সার আমদানিতে। জুলাইয়ে যেখানে সার আমদানিতে খরচ হয়েছিল ২৭৬ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে সেটি ৪৬% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৪ মিলিয়ন ডলারে। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ বাড়ায় সার আমদানি বাড়ছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
চাল আমদানিতে খরচ জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় ৬৮% বেড়েছে। আগস্টে ২.৮৮ লাখ মেট্রিক টন চালের দাম পরিশোধ করা হয়েছে ১৬.৭৮ মিলিয়ন ডলার। এসব আমদানি এলসি কয়েকমাস আগের খোলা।
আগস্টে নতুন করে আরো ১.০৪ লাখ টন চালের আমদানি এলসি খোলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এটুকু চাল আমদানিতেই খরচ হচ্ছে ৪৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি। অথচ আগস্টে যে পরিমাণ চালের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, নতুন এলসি খোলা হয়েছে তার মাত্র তিন ভাগের একভাগ চাল কিনতে।
চিনি আমদানিতে জুলাইয়ের তুলনায় গতমাসে ১১ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ হয়েছে। খরচ বাড়ার হার ২২%। জুলাইতে পেঁয়াজ আমদানিতে ৬ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়েছিল। আগস্টে সেটি প্রায় ১৪ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকেছে। ওষুধ আমদানিতেও জুলাইয়ের তুলনায় ৬৬% খরচ বেড়ে গেছে। ডাল আমদানিতেও খরচ বেড়েছে কিছুটা।
এর বাইরে স্ক্র্যাপ ভেসেল আমদানিতে ৬২% খরচ বেড়েছে। জুলাইয়ের তুলনায় এই খাতে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ হয়েছে। মোটরযান আমদানিতেও খরচ প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার বেশি হয়েছে। সিমেন্ট আমদানিও বেড়েছে জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় ৪৭%।
অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে এখন রডের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন বাড়তি এই দাম থেকে মুনাফা করতে। এসব কারণে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ভেসেলের আমদানি বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর আমদানি বাড়া দেশের রিয়েল এস্টেট খাত চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিতও দেয়। সূত্র : টিবিএস