
যুক্তরাষ্ট্রে আগস্টে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়েছে

অর্থনীতি ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে গত আগস্টে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়েছে। এ সময় ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়। পরিবহন খাতের খরচও দিন দিন বাড়ছে। খবর: সিএনএন। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল গত সপ্তাহে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে দৃঢ? প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। শেয়ার বিজ
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির হার স¤প্রতি শ্রমবাজারের তথ্যকে অনুসরণ করছে। তাই শ্রমবিভাগের ওই প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ওহাইয়োর কলম্বাসে নেশনওয়াইডের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বেন আয়ারস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত মাসে কিছুটা কমেছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, তা এখনও যথেষ্ট নয়। সর্বশেষ তথ্য অনুুসারে, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, আগের মাস জুলাইয়ে যা ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। মূলত পেট্রোলের দাম হ্রাসের কারণে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের হতাশার কারণ হলো, খাদ্য, বাড়ি ও স্বাস্থ্যসেবার মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জুলাইয়ে অপরিবর্তিত থাকার পর গত মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক শূন্য দশমিক এক শতাংশ বেড়েছে। তখন পেট্রোলের দাম ১০ দশমিক ছয় শতাংশ কমিয়ে ভাড়া, খাবার ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বাড়ানো হয়েছিল। এতে খাবারের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক আট শতাংশ এবং ঘরে খাবারের খরচ বেড়েছে শূন্য দশমিক সাত শতাংশ। এরই মধ্যে ভোক্তারা বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য বেশি অর্থ খরচ করছেন।
অর্থনীতিবিদরা সিপিআই শূন্য দশমিক এক শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছেন। আগস্টসহ ১২ মাসে সিপিআই আট দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। আগস্টের মূল্যস্ফীতি নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেন প্রশাসন ও ডেমোক্রেটদের জন্য মাথাব্যথার কারণ, যা রিপাবলিকানদের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসকে উল্টে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, ১৯৭৯ সালের পর যা সর্বোচ্চ। সুপারশপে গিয়ে ক্রেতারা সব পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি দেখতে পান। ডিমের দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। একই সময় ময়দার দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ। দুধ ও রুটির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৭ ও ১৬ দশমিক ২ শতাংশ। মাংস ও পোলট্রি পণ্যের দামও বেড়েছে। মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, অন্যান্য মাংসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ফল ও শাকসবজির দাম একত্রে বেড়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে মুদিপণ্যের দামেও উল্লম্ফন দেখা গেছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময় রেস্টুরেন্ট মেনুর দাম বেড়েছে আট শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেড সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্লেষকদের ধারণা, খাদ্যের দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক প্রভাব। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে গম ও অন্যান্য পণ্যের দাম অতীতের তুলনায় বেড়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন খরা ও অ্যাভিয়ান ফ্লুর মতো রোগের প্রভাবে দাম বেড়েছে। এর মধ্যে অ্যাভিয়ান ফ্লুর কারণে ডিম ও টার্কি আমদানি করা হয়নি।
ভোক্তাদের আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি কমবেশি সব ভোক্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ক্রেতারা অন্য পণ্য যেমন পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা গ্যাসোলিনের বেলায় কার্পণ্য করতে পারে, খাদ্যের বেলায় যা সম্ভব নয়।
এমনকি অন্য কেনাকাটা কমিয়ে ক্রেতারা তাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনছেন। এ কারণে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাতে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভ্যাস কমেছে ১১ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম হ্রাস পাওয়ার কারণে মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এতে মানুষের হাতে খরচ করার মতো অর্থের সরবরাহ কিছুটা বাড়বে। সম্পাদনা : জেরিন আহমেদ
