মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাথে ভূমি ইজারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ছয়টি কোম্পানি। বুধবার বেজার অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি হয়।
জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করবে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বেজার কর্মকর্তারা এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বাংলাদেশে তাদের প্রথম কারখানা স্থাপন করে ১৯৯৬ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম পর্যায়ে ৩০ একর জমিতে তাদের দ্বিতীয় শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।
আজ উল্লিখিত জমির সাথে আরও ১০ একর যুক্ত হওয়ার ফলে সামগ্রিকভাবে ৪০ একর জমিতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে। এ সার্বিক কর্মকান্ডে প্রায় ৭০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বরাদ্দকৃত জমিতে প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যারহাউস, লজিস্টিক এলাকা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার, সড়ক, ডরমিটরি, স্বাস্থ্য সেবা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সবুজায়ন করা হবে। পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব রোধে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে হেলথকেয়ার ফার্মা ৫টি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে। ইফাদ মোটর্স লিমিটেড বাংলাদেশের ইফাদ গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ইফাদ গ্রুপ ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত এবং বাণিজ্যিক যানবাহন ব্যবসায় বিশেষভাবে পরিচিত। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৩৭০ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ১০ ??তলা ৩-তারকা হোটেল নির্মাণ ও পরিচালনা, বিনোদন ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের জন্য ইফাদ মোটরস লিমিটেডের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব থেকে জানা যায়, এতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে এবং ৩ শতাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া ইফাদ গ্রুপ ইতঃপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরেও ১০ একর জমিতে বিনিয়োগ করেছে।
ডার্ড গ্রুপ ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং, অবকাঠামো, সফটওয়্যার এবং কৃষি খাতে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ রয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (প্রাইভেট) লিমিটেড ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (প্রাইভেট) লিমিটেড সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে হোটেল ১ একর জমিতে হোটেল স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা দেয়। এতে প্রায় ২.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ২০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে মর্মে বিনিয়োগ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন উপস্থিত সকল বিনিয়োগকারীকে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বেজা বাংলাদেশে বিনিয়োগ-বান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, মিরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প নগর নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে।
তিনি বলেন, অন স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিরানভূমি আজ শিল্পের পদচারণায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে দ্রুত শিল্প স্থাপনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সকল সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বেজা সাধ্যমত সম্পন্ন করছে। তিনি আরো বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটিকে একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেজা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। নির্বাহী চেয়ারম্যান সভায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে বেজার আওতাধীন বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েকটি শিল্পের বাণিজ্যিক উৎপাদন উদ্বোধন করার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ওষুধশিল্পে হেলথকেয়ার একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানী হচ্ছে। মিরসরাইতে শিল্প স্থাপন প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি মাইলফলক বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সক্রিয় উপাদান দেশে উৎপাদিত হলে ওষুধশিল্পে কাঁচামাল আমদানীর পরিমাণ কমে আসবে।
নতুন পণ্য উৎপাদনে তার প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে বলেন ইফাদ মোটর্স লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব তাসকিন আহমদ এ চুক্তি স্বাক্ষরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন তারা তাদের হোটেল স্থাপনের দ্রুত শুরু করবেন বলে আশা করছেন। পর্যটন শিল্পের বিকাশে এবং দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণে
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান। ডার্ড গ্রুপ ইতঃপূর্বে বিভিন্ন প্রকল্পে বেজার সাথে কাজ করেছে উল্লেখ করে গ্রুপের পরিচালক মিজ সেঁজুতি দৌলাহ বিনিয়োগের এই নতুন উদ্যোগে বেজার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ট্যুরিজম পার্কে বেজার এই কার্যক্রম অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।
ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (প্রাইভেট) লিমিটেড-এর পরিচালক মাহমুদুল হোসাইন শুভ বলেন সুদীর্ঘ বালুকাময় সৈকতে অবস্থিত সাবরাং-এর মত নয়নাভিরাম স্থানে পর্যটনের বিকাশে তার প্রতিষ্ঠান লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করতে চায়। বেজার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন নির্বাহী সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব আব্দুল আজিম চৌধুরী। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, ইফাদ মোটর্স লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব তাসকিন আহমদ, ডার্ড গ্রুপ এর পক্ষে পরিচালক মিজ সেঁজুতি দৌলাহ এবং ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (প্রাইভেট) লিমিটেডের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাহমুদুল হাসান।