ওয়েজবোর্ড গঠনে দেরি হলে ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স চায় শ্রমিক নেতারা
অর্থনীতি ডেস্ক : শ্রম সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে বিজিএমইএ গঠিত আরবিট্রেশন কমিটি সক্রিয় করার দাবিও উঠে আসে সভায়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের টিকে থাকার জন্য দ্রুত ওয়েজবোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে দেশে ১৬টি শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)।
ওয়েজবোর্ড গঠনের আগ পর্যন্ত শ্রমিকদের ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স এবং রেশন চালু করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া শ্রম সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) গঠিত আরবিট্রেশন কমিটিকে সক্রিয় করার দাবিও উঠে আসে ওই সভায়।
মঙ্গলবার তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানিয়েছে আইবিসি।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বিজিএমইএ শ্রমিকদের এ দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে। বিশ্ববাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় পোশাকের অর্ডার কমছে জানিয়ে এ বিষয়টি শ্রমিকদের বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। একইসঙ্গে রেশন চালু করার জন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে। এছাড়া শ্রম সংক্রান্ত যে কোন সমস্যায় বিদেশীদের কাছে নালিশ না দিয়ে দেশেই সমাধানের জন্য শ্রমিকদের প্রতি বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলেও জানানো হয়। জবাবে শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমাধান না পেলে তারা বিদেশী তথা বায়ারদের কাছে যাবেন।
সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে পোশাক শ্রমিকদের পক্ষে এখন বর্তমান বেতনে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য দ্রুত মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছি। মজুরি বোর্ড গঠন করতে যে সময় লাগবে, ওই সময়ের জন্য শ্রমিকদের ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স দেওয়া এবং এলাকাভিত্তিক সব শ্রমিককে না হলেও চতুর্থ থেকে সপ্তম গ্রেড পর্যন্ত শ্রমিকদের রেশন সুবিধার আওতায় আনতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। শ্রমিকদের বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিজিএমইএ গঠিত আরবিট্রেশন কমিটিকে অ্যাকটিভ করার কথা বলেছি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএর আইএলও বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এএনএম সাইফুদ্দিন। তিনি বলেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের কষ্ট হচ্ছে, তা আমরা বুঝি এবং তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি আমাদের প্রতিকূলে। অর্ডার ক্রমাগত কমছে। তবুও যেহেতু পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ড গঠনের নিয়ম রয়েছে, ওই নিয়ম অনুযায়ী মজুরি বোর্ড গঠন হবে বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে সরকার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা মনে করি।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ মজুরি বোর্ড গঠন হয়েছিলো ২০১৮ সালে। সে হিসেবে পরবর্তী মজুরি বোর্ড গঠন হওয়ার কথা আগামী বছর। তবে বিজিএমইএর অপর একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার নতুন মজুরি বোর্ড কিংবা মহার্ঘ ভাতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সেক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না।
এদিকে সভার বিষয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজিএমইএ’র এক প্রেস রিলিজে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের মধ্যে কাজের সুসম্পর্ক বজায় তৈরি পোশাক খাতকে এর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। এই গুরুত্ব বিবেচনায় বিজিএমইএর একটি সালিশ তথা মীমাংসা কমিটি রয়েছে যা বিরোধ ও অভিযোগের মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিনামূল্যে কর্মীদের পরিষেবা প্রদান করে। সূত্র : টিবিএস