এডিবি’র কাছে নীতি ভিত্তিক ঋণ চাইলেন অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণ প্রদানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর বিশেষ সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা মোকাবেলায় মিশ্র অর্থায়নের পরিবর্তে নমনীয় ঋণ সহায়তাও কামনা করেন তিনি।
বুধবার ম্যানিলায় এডিবি’র সদর দপ্তরে সংস্থার বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার সঙ্গে এক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এ সহযোগিতা চেয়েছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এডিবি’র প্রেসিডেন্ট-এর সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব স¤প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার ও আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতি ভিত্তিক ঋণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ এডিবি সদর দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য গতিশীল ভ‚মিকা পালন করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা মোকাবেলায় মিশ্র অর্থায়নের পরিবর্তে নমনীয় ঋণ সহায়তা হবে বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এডিবি আইসিটি ভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কৃষি বৈচিত্রকরণ, স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানসম্পন্ন অবকাঠামোর কৃষি প্রবর্তনে উদার সহায়তা প্রসারিত করতে পারে।
এডিবি’র বার্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করায় সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, বাংলাদেশ-এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫) বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে। যা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশেরর জন্য ১২-১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার যোগান থাকবে বলে আশা করা যায়।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রায় কখনোই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্ষমতার সাথে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে চলেছে। জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ, মাত্র ৩৪ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবি’র ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মোট বকেয়া ১১.৬৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ও এডিবির সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও এডিবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৩ সাল আমাদের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক অর্জনে এডিবি’র ক্রমাগত সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এডিবি প্রেসিডেন্ট-কে বাংলাদেশ সফর এবং ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপনের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিশাল পোর্টফোলিও এবং এডিবি’র সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততার কথা বিবেচনা করে, বাংলাদেশ থেকে এডিবি’র শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশেষ করে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিয়োগেরও অনুরোধ জানান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার প্রশংসা করে এডিবি’র প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং টিকা কার্যক্রম প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি এডিবি’র বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সবসময় এডিবি থাকবে।