আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতার পরামর্শ দিলেন ডা. আব্দুল কাদের
শাহীন খন্দকার : আগারগাঁও শেরে-ই বাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কর্ণিয়া বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের বলেন, চোখ ওঠা রোগকে আমরা ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস বলে থাকি। এটা সিজনাল একটি রোগ। গরমে এবং বৃষ্টিতে এই রোগ বেশি হয়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে এই ভাইরাল ইনফেকশন হচ্ছে। কনজাংকটিভা বা চোখের প্রদাহ সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে স্বল্প কেতর আসা এ রোগটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। যাকে বলা হয় চোখ ওঠা রোগ।
এই রোগটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ঋতু পরিবর্তন। অর্থাৎ বর্ষার শেষে এবং শীতের শুরুতে সাধারণত এমন ভাইরাসগুলো গ্রো করে থাকে। শুধু তাই-ই নয় এটি খুব সহজেই একজন মানুষ থেকে আরেকজনে ছড়ায়।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষের চলাফেরা গতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। আগে মানুষ মাক্স ব্যবহার করতো। সবাই হাত-মুখ ধুয়ে সর্তক থাকার চেষ্টা করতো। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা সেখান থেকে সরে এসেছি। ব্যক্তিগত হাইজিন যেটা আগের চেয়ে অনেক শিথিল করেও ফেলেছি। চোখ উঠা রোগটি অতি মাত্রায় ছোঁয়াচে হওয়ায় এই রোগের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। রোগটির লক্ষণ দেখা মাত্র নিজেকে আইসোলেশনে রাখতে হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই রোগটি সাধারণত ৫-৭ দিন থাকে। এই ৭দিন আক্রান্ত রোগীর সুস্থ কারো সংর্স্পশে যাওয়া ঠিক হবে না। তেমনি রোগীর সংর্স্পশে অন্যদের আসার বিষয়ে অতি মাত্রঅয় সতর্ক থাকতে হবে। এসময়ে দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে এ রোগে সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হলেও শিশুদের সংখ্যা বেশি। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে রোগটির সংক্রমণ অধিক বলে জানা যায়।
কর্নিয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল কাদের বলেন, সতর্ক না হলে এ রোগ থেকে কর্নিয়ার আলসার ও অন্ধত্বের মতো গুরুতর অবস্থাও হতে পারে। যদি কোন ওষুধ বা চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়, তবে হাতটি ভালোভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দিতে হবে।
গত জুলাই থেকেই দেশে এ রোগের বিস্তার লক্ষ্য করা গেলেও সেপ্টেম্বরে এসে বেড়েছে প্রকোপ। আক্রান্ত কারো সঙ্গে খেলাধুলা কিংবা সতর্কতা ছাড়াই আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার কারণে শিশুদের রোগটি বেশি হচ্ছে। এমনিতেই বর্ষাকালে চোখের নানান সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় কনজাঙ্কটিভাইটিসের। এটি প্রথমে এক চোখে হয়। পরে অন্য চোখকেও আক্রান্ত করে। এমনটি হলে চোখের পাতায় ময়লা জমে। চোখে ব্যথা হওয়া বা খচখচ করা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখের নিচের অংশ ফুলে যাওয়, চোখে জ্বালা বা চুলকানি, চোখে আলো পরলেই কষ্ট হওয়া এ রোগে লক্ষণ। এই রোগের চিকিৎসা সর্ম্পকে অধ্যাপক ডা. কাদের বলেন, বেশিরভাগই কনজাঙ্কটিভাইটিস ভাইরাসজনিত রোগ এমনিতেই সেরে যায়। এই রোগে কার্যকরী এন্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে। এর জন্য চোখ ও এর চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। বার বার নখ বা হাত দিয়ে চোখ চুলকানো না বা রগড়ানো যাবে না। ময়লা জমলে টিস্যু পেপার বা পাতলা নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অনেকেই মনে করেন পানির ঝাপটা দিলে আরাম পাওয়া যাবে। কিন্তু বার বার চোখে পানি দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, তবে সব সময় হাত-পা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে। রাস্তায় নোংরা পানির সংস্পর্শে এলে বাড়ি ফিরেই হাত-পা ধুয়ে ফেলতে হবে।
কর্ণিয়া বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, রোদচশমার ব্যবহার ভালো। এতে চোখে ভুলবশত হাত লেগে যাওয়া এবং ধুলা-ধোঁয়া থেকে বাঁচা যায়। নিজের ব্যবহার করা প্রসাধনসামগ্রী অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। নিজেও অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে, রুমাল, বালিশ, চাদর ও প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। হাত দিয়ে চোখ ঘষে চুলকানো যাবে না।
সতর্কতা সর্ম্পকে তিনি বলেন, অন্যের কথা শুনে আইড্রপ ব্যবহার করা উচিত হবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন অবস্থাতেই চোখে ওষুধ ব্যবহার করা যাবেনা। কারণ ভাইরাস এমন একটি জিনিস, যেখানে ইন্ট্রিভাইরাস এখানে খুব একটা কাজ করেনা।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, গ্রাম-গঞ্জে এ রোগটি হলে চোখে ঝিনুক পানি, চুনের পানি, গাছের রস, গোলাপজল বা মধু দেওয়া হয়। কোন অবস্থাতেই চোখে এসব ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এসব চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম