আবারও শেয়ারবাজারে সূচক নিম্নমুখী
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার একদিন পর আবারও সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। আগের কার্যদিবস উত্থান হলেও গতকাল সোমবার পতন হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। আর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যে দরপতন হচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কয়েকদিনের টানা উত্থানের কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ বেড়ে গেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে। শেয়ারবাজারের এ দরপতন সম্পর্কে বিনিয়োগকারী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, বাজার ভালো দেখে নতুন করে কিছু টাকা ঢুকিয়ে ছিলাম। একটি কোম্পানির শেয়ার দাম কয়েকদিন ধরে বাড়ছিল। যে কারণে কোম্পানিটর শেয়ার কিনেছি। কিন্তু আমি কেনার পর থেকেই দাম কমছে। এছাড়া আগে যেসব শেয়ার কেনা আছে, সেগুলোর বেশিরভাগ ফ্লোরে আটকে আছে। কবে এসব শেয়ার বিক্রি করতে পারবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে।
মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি দুই বাজারেই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেইসঙ্গে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তার চেয়ে বেশি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই দরপতন হয়। এতে সপ্তাহজুড়েই কমে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে কমে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। পাশাপাশি কমে বাজার মূলধন। এ পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। সেইসঙ্গে বাড়ে লেনদেনের পরিমাণ। রোববারের ধারাবাহিকতায় সোমবারও লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি শুরুতে লেনদেনের গতিও ছিল বেশ ভালো। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধানসূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম আধাঘণ্টা সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে। সেইসঙ্গে আধাঘণ্টার লেনদেনেই প্রায় তিনশ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে যায়। তবে লেনদেন শুরুর এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকেনি। বরং লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে দরপতনের তালিকায়। ফলে সূচক ও লেনদেন কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২২টির। আর ১৭৮টির দাম অপরবর্তিত। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে নেমে গেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪২২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ৮২ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বিবিএস কেবলস, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, শাইনপুকুর সিরামিকস, কপার টেক, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন এবং ন্যাশনাল পলিমার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৪টির এবং ৯৪টির দাম অপরিবর্তিত।