রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ বছরে ১০৪ খুন টার্গেট নেতা-স্বেচ্ছাসেবক
অর্থনীতি ডেস্ক : প্রত্যাবাসন যত বিলম্বিত হচ্ছে ততোই নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ছে জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। গত ৫ বছরে ক্যাম্পে ১০৪ খুনসহ মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮টি। এসব মামলায় আসাসি হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জন। এসব হত্যাকাÐে খুনিদের মূল টার্গেট হলো রোহিঙ্গা নেতা ও স্বেচ্চাসেবকরা।
স¤প্রতি অস্ত্র হাতে এক রোহিঙ্গা যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যায় অস্ত্রের যোগান ও টাকার বিনিময়ে তিনি চারটি হত্যাকাÐে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া শুধু তার সঙ্গেই রয়েছে আরও ২৫ জন অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী যুবক। এই ভিডিও ভাইরালের পর থেকে এই যুবককে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তথ্যমতে, রোহিঙ্গা আগমনের সময় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত গত ৫ বছরে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও মানব পাচারসহ নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮ জন। এতে আসামি হয়েছেন ৫ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে খুন করা হয়েছে ১০৪ জন। এসব হত্যাকাÐের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন রোহিঙ্গাদের নেতা, মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবক।
গত বছরের ২৯ পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে। যিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখছিলেন। এছাড়া ২১ অক্টোবর ক্যাম্পের একটি মাদরাসায় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে ছয়জনকে। ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয়রা জানান, যেসব রোহিঙ্গা নেতা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলছেন- সন্ত্রাসীরা তাদের হত্যা করছে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারী আরও জোরদার কারা উচিৎ বলে দাবি করেন তারা।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ আনোয়ার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি বা নেতা ও স্বেচ্চাসেবক যারা আছেন তারা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেন। তারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাই এসব নেতাদের হত্যার জন্য টার্গেট করে। যেমনটা করেছে রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে। ক্যাম্পে আরও বেশি গোয়েন্দ নজরদারী বাড়ানো দরকার।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের সামগ্রিক অপরাধ দমনে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাদের কাছ থেকে ব্যবসা নিয়ে ফেলতে হবে। তাদের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কারণে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা শান্তি কামনা করছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কারণে তারাও আতঙ্কে পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ।
মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, এই দেশ তাদের শান্তিতে রাখলেও জীবন অনিরাপদ করে তুলেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। কিছু রোহিঙ্গার কারণেই তারা সবাই বদনামের ভাগী হচ্ছেন। এই অবস্থায় তারা শান্তি প্রত্যাশা করছেন।
কবির হোসেন নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, এই দেশের প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার জন্য পাহারা দেয়। আর তাদের ভাইয়েরাই নিজেদের খুন করছে। এর চেয়ে দুঃখ আর কিছুই হতে পারে না। তবে বর্তমানে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তৎপরতা বাড়ায় কোণঠাসা হয়ে আছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছোট্ট একটি জায়গার মধ্যে অসংখ্য লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার মামলাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়। ক্যাম্পে অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জোরদার রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব দফতর নিয়ে একাধিক সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী সবাই খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সূত্র : সারাবাংলা