সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহ ৫ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে চার কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। এতে করে সপ্তাহ শেষে দেখা গেছে সূচকের বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। সূচক কমলেও ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। আর লেনদেন অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অধিকাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৭ হাজার ৫৪১ টাকায়।। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন চার হাজার ৩২ কোটি ০০ লাখ ৪০ হাজার ৯৮১ টাকা কমেছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চেক দিয়ে এখন থেকে কোন শেয়ার কেনা যাবে না। তবে চেক নগদায়ন হলে শেয়ার কিনা যাবে। বিএসইসির এই সার্কুলারের কারণে শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব পড়েছে। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে চাপ। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ারবাজার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) চেক ইস্যুর নির্দেশনা প্রত্যাহারে করা উচিত। এতে করে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে। পাশাপাশি শেয়ারের ডিমান এবং সাপ্লাই বাড়বে। কিন্তু বিএসইসির বর্তমান নিয়মের কারণে বাজারে লেনদেনের পাশাপাশি ডিমান্ড এবং সাপ্লাই কমেছে। যার প্রভাব শেয়ারবাজারে বড় আকারে পরেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কার প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারেও পড়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫ হাজার ৮০১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৬৫ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৮৩২ কোটি ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৪২৯ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে ৯৬৮ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ০৩৬ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০১.৯৫ পয়েন্ট বা ১.৫৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৯২.৩০ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২.৬৭ পয়েন্ট বা ০.৮৯ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩০.৪১ পয়েন্ট বা ১.৩২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪০৭.০৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৭৭.৬৫ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির বা ১০.৬২ শতাংশের, কমেছে ১৭১টির বা ৪৪.৩০ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৪টির বা ৪৫.০৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর। গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবথেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৮৬ কোটি ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ৩৩৫ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইস, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, কেডিএস এক্সসরিজ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২৬ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৭৩ কোটি ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৭ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ৯৯ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৯ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩১০.৬০ পয়েন্ট বা ১.৬২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮০০.৩১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১৮৫.৯৭ পয়েন্ট বা ১.৬২ শতাংশ, ডিএসই-৩০ সূচক ৬২.১২ পয়েন্ট বা ০.৪৬ শতাংশ, ডিএসই-৫০ সূচক ১৭.৬৮ পয়েন্ট বা ১.২৮ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ১৯.৪৬ পয়েন্ট বা ১.৫৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ২৬৮.১৯ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩১৭.১৯ পয়েন্টে, এক হাজার ৩৫৯.০৯ পয়েন্টে এবং এক হাজার ২১১.৩৬ পয়েন্টে।
সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ২৯৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৮টির বা ১২.৭৫ শতাংশের দর বেড়েছে, ১২৯টির বা ৪৩.২৯ শতাংশের কমেছে এবং ১৩১টির বা ৪৩.৯৬ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।