ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ৩০ জেলার ৮৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমির রোপা আমনসহ ফসলের ক্ষতি
মতিনুজ্জামান মিটু: ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে, আগামী দু’ তিন দিনের মধ্যেই ক্ষতির হিসেব পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং। অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংেেয়র অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, গত সোমবার ও মঙ্গলবারে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে উপকুলীয় ১৯ জেলাসহ মোট ৩০ জেলার ৮৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমির রোপাআমন ও সব্জিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে আক্রান্ত ফসল পানিতে তলিয়ে বা হেলে পড়ে ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরে উপকুলীয় ১৯সহ ৩০ জেলায় মোট ২৭ লাখ তিন হাজার ১০১ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও সব্জিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়।
তিনি জানান, সিপ্রাংয়ে আক্রান্ত ৩০ জেলার মধ্যে উপকুলীয় ১৯ জেলায় মোট ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ও ১ লাখ ২০ হাজার ১৫০ হেক্টর জামিতে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমির সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমন পনিতে ডুবে, হেলে পড়ে ও কঁদায় নষ্ট হয়েছে। উপকুলীয় ১৯ জেলায় আক্রান্ত রোপা আমনের ক্ষতির পরিমাণ ২.০৪শতাংশ।
এদিকে কৃষি তথ্য সার্ভিস সুত্র জানায়, কৃষিতে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জরুরি প্রস্তুতিমূলক সভা সোমবার বিকালে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, (স¤প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা), অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা), মহাপরিচালক (বীজ)সহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংস্থা প্রধান, ঘুর্ণিঝড়প্রবণ জেলাগুলো কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় কতিপয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা’র মধ্যে রয়েছে; জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দপ্তর বা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল এবং সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়। সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি বিভাগের অফিসে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা, ঘুর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি ও পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক মাঠে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া, ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেওয়া, ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অগ্রিম প্রস্তুত করে রাখা যাতে করে দ্রæততম সময়ের মধ্যে কৃষকদের পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া যায়, যেসব এলাকায় আমন ধান ৮০শতাংশ পেকেছে সেগুলো কাটার জন্য পরামর্শ দেওয়া, উপকূলীয় এলাকায় ফসল ক্ষেতে পানি প্রবেশ করলে দ্রæততম সময়ের মধ্যে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক সমন্বয় সাধন করা, ¯øুইচ গেট অপারেশনের মাধ্যমে লবণাক্ত পানি শস্য ক্ষেতে প্রবেশ রোধ করতে হবে। অধিক উচ্চতায় জোয়ারের কারণে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করলে তা নিষ্কাশনের দ্রæত ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ নিয়মিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে।