কর্মসংস্থান হয়েছে ১.৫ মিলিয়ন ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪১৫ মিলিয়ন ডলার
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, সিএমএসএমইরাই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, দেশের জিডিপিতে এখাতের অবদান ৩০% এবং মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৪০শতাংশ মানুষ এখাতের সাথে জড়িত। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমাদের স্টার্টআপের সংখ্যা প্রায় ১২০০ এবং প্রতিবছর প্রায় ২০০ স্টার্টআপ এখাতের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে এখাতের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ব্ওে দক্ষ মানব সম্পদ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, দূর্বল সাপ্লাইচেইন অবকাঠমো, ইনোভেটিভ চিন্তা-চেতনা এবং আর্থিক সহায়তার অনিশ্চিয়তার কারণে আমারা এ খাতে থেকে কাঙ্খিত সাফল্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত‘সিএমএসএমই স্টার্টআপদের সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার শনিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আলম যথাক্রমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, ১৭টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ হতে প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং এটুআই (ইন্সপায়ার টু ইনোভেশন) প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ ফান্ডের মাধ্যমে যেসব স্টার্টআপ উদ্যোক্তাবৃন্দ কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচেছন, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার প্রতিটি জেলায় শেখ কামাল আইটি অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণে করেছে, যার মাধ্যমে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে, এছাড়াও হাই-টেক পার্ক সমূহে স্টার্টআপ এবং ফ্রিলেন্সারদের জন্য বিনামূল্য অফিস ও জায়গা বরাদ্দের পাশাপশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব আরো বলেন, দেশের ফিনটেক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার বিনিময় নামে পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য একটি প্লাটফর্ম স্থাপনের কাজ চ‚ড়ান্ত করেছে, যেটি এখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং বৃদ্ধি পাবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। তিনি জানান, বর্তমান সরকার ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের খসড়া চ‚ড়ান্তকরণের পথে রয়েছে, যেটি বাস্তাবায়ন হলে বর্হিবিশে^ তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আমাদের অবস্থানের আরো উন্নয়ন ঘটবে। এখাতের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সরকার ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ^বিদ্যালয়সমূহের মধ্যকার একটি সুদৃঢ় সমন্বয়ের উপর জোরারোপ করেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আলম বলেন, নতুন শিল্পনীতিতে সিএমএসএমই খাতের সংজ্ঞায়ন সুনিদিষ্টকরণ করা হয়েছে, যেটি এখাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। তিনি জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতোমধ্যে এসএমই বোড গঠন করেছে, যদিও এখাতের উদ্যোক্তাদের সেখানে প্রতিনিধিত্ব তেমন আশানুরূপ নয়, এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের বেশি হারে উক্ত বোর্ডে অন্তভর্‚ক্তির আহŸান জানান। তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের সফল হওয়ার জন্য তিনি ইনোভেশন কার্যক্রমের উপর বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার জোরারোপ করেন এবং এদের উন্নয়নে বিদ্যমান নীতিমালা ও ভ্যালু এডিশন কার্যক্রম আরো সহজীকরণ, সেই সাথে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় একটি এসএমই বন্ড প্রবর্তনেরও প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে পাঠাও-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ জানান, ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪১২ মিলিয়ন এবং এর ফলে দেশে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের অনুপস্থিতি, আর্থিক সহায়তার ঘাটতি, দক্ষ মানবসম্পদ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। স্টার্টআপ খাতের উদ্যোক্তাদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে স্টার্টআপ পলিসি প্রণয়ন শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, সরকারী সেবা ও সহযোগিতা প্রাপ্তি আরো দ্রæততরকরণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
চালডাল-এর ফাইন্যান্স ডিরেক্টরতানভীর রশিদ,ফুড পান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা আমব্রিন রেজা এবং বাংলাদেশ এঞ্জেলস্-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নির্ঝর রহমান সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দস্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি সহজীকরণ, প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও যুগোপযোগীকরণ, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও শিল্প খাতের সমন্বয় বৃদ্ধি, ইনোভেশন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি স্টার্টআপ পলিসি প্রণয়নের আহŸান জানান।