জলবায়ু পরিবর্তন পরিকল্পনায় ঘাটতি, আরও জোরদার পদক্ষেপ প্রয়োজন: সাইমন স্টিয়েল
শাহনাজ বেগম: জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমনের নি¤œগামী প্রবণতার কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। প্যারিস চুক্তির অধীনে আমাদের জলবায়ুর যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার দিকে এগোচ্ছে বলে দৃশ্যমান।
প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ যেভাবে বৈশি^ক তাপমাত্রা বাড়ছে তা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করা, গুরুতর খরা, তাপপ্রবাহ এবং বৃষ্টিপাত সহ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো এড়ানোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। যা বর্তমান জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে তা আগামী আট বছরে বাস্তবায়ন হতে পারে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন প্যারিস চুক্তির ১৯৩টি সদস্যর মধ্যে গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ২৬) থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনায় ২৪টি আপডেট বা ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা (এনডিসি) অন্তর্ভুক্ত করেছে। তাদের একসাথে নেয়া, পরিকল্পনাগুলো ২০১৯ সালে মোট বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৯৪.৯% সম্পাদন করেছে।
স্টিয়েল আরোও জানান,গত বছর গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে, সমস্ত দেশ তাদের জলবায়ু পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা এবং শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছিল।” তবে শুধুমাত্র ২৪টি নতুন বা আপডেট জলবায়ু পরিকল্পনা কপ ২৬ থেকে জমা দেয়ার ব্যাপারটা হতাশাজনক।
তিনি বলেন, সরকারী সিদ্ধান্ত এবং কর্মপরিকল্পনাগুলো অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে করা দরকার কারণ, আমরা যে মাধ্যাকর্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক পরিণতি যে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি তা এড়াতে আমাদের বাকি থাকা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদী স্বল্প-নির্গমন উন্নয়ন কৌশলগুলিতে যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে তাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৫০ সালে প্রায় ৬৮% শতাংশ ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কম হতে পারে, যদি সমস্ত দীর্ঘমেয়াদী কৌশল সময়মতো সম্পূর্ণরূপে বাস্তবাযাপিত হয়।
তিনি বলেন, “ কপ২৭ হল সেই মুহূর্ত যখন বৈশ্বিক নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ফিরে পেতে আলোচনা করতে পারেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। একই সঙ্গে তারা জলবায়ুর ব্যাপক রূপান্তরের দিকে একযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পাওে বলে তিনি আশা করেন।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের একটি নতুন প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন পরিকল্পনায় যে সব দেশগুলো রয়েছে তারা বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের বক্ররেখাকে নি¤œমুখী করায় ভূমিকা রাখছে কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টাগুলো শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করার জন্য অপর্যাপ্ত।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্যারিস চুক্তির আওতায় যে ১৯৩টি সদস্য দেশ রয়েছে তাদের সম্মিলিত জলবায়ু প্রতিশ্রæতি ছিল সেখান থেকে বিশ^কে প্রায় ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই প্রতিবেদনটিতে আরোও লক্ষণীয় যে, প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর যে পরিকল্পনা ছিল তা ১০.৬% তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ থেকে ২০২০ সাল-এই এক দশকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ সালের তুলনায় বেড়েছে ১.০৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত পাঁচ বছর ছিল বিগত দেড়শ বছরের তুলনায় সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। গত বছরের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে অনুমানের চেয়েও নির্গমন ২০৩০ সালের পরেও বাড়তে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল ২০১৮-এর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে কপ২ নির্গমন ২০১০ সালের স্তরের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫% কমাতে হবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে আইপিসিসি থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ বিজ্ঞানভিত্তিক বেসলাইন জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩% কমাতে হবে। যা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধির ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের বা পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে-প্রকৃতির প্রতি অবিচার, বন উজাড়, শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য, কালো ধোঁয়া, যানবাহনের কারণে পরিবেশ দূষণ। কিন্তু এর সমন্বিত কারণ হলো কার্বন নিঃসরণ। এই কার্বন নিঃসরণের অন্যতম কারণ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার।