ডিএসইর লেনদেন ১৪০০ কোটি টাকার বেশি বীমাও আইটি খাতের কল্যাণে শেয়ারবাজারে বড় উত্থান
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবারও বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন বীমা ও আইটি খাতের কল্যানে শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর লেনদেন ১৪০০ কোটি টাকার উপরে হয়েছে। এদিন অন্যান্য খাতের তুলনায় বীমা খাতের দাম বাড়ার তালিকায় বেশি দাপট দেখিয়েছে। এ খাতের কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেনি। ৪৮টি বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি আইটি খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৯টির কমেছে ১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ফ্লোর প্রাইজ বেধে দেওয়ার পর থেকে টানা গত কয়েক মাস ফ্লোর প্রাইজে অবস্থান করছে ২০০ এর বেশি কোম্পানির শেয়ার। কিন্তু ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থ বছরের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করার পর কোম্পানিগুলো শেয়ার ফ্লোর প্রাইজ ভেঙ্গে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। এতে করে ফ্লোর প্রাইজের শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তির আবাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কিছু কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস থেকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এতে করে ফ্লোর প্রাইজে আটকে থাকা শেয়ারের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এরই ফলে ফ্লোর প্রাইজের শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
যে সকল বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ডের আশায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন, সে সকল বিনিয়োগকারী এখন ভালো ডিভিডেন্ট ঘোষণা করেছে এমন কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরে থাকলেও সে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছে। এতে করে দীর্ঘদিন ক্রেতা না থাকা অনেক কোম্পানি শেয়ারে এখন ক্রেতা মিলছে। যার কারণে এই সকল কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর ভেঙ্গে উপরে দিকে উঠতে শুরু করেছে। আর এরই ফলে ফ্লোর প্রাইজ আটকে থাকা বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকে। অপরদিকে, সব খাত মিলিয়ে ১১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির। আর ২১৬টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৬১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯০২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫৫৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বসুন্ধরা পেপার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ওরিয়ন ফার্মা, নাভানা ফার্মা, কেডিএস এক্সসরিজ, আমরা টেকনোলজি এবং জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৮৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩২টির এবং ১৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।