বাংলাদেশের কাছে ২ সার কারখানা বেচতে চায় উজবেকিস্তান
অর্থনীতি ডেস্ক : মধ্য এশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দেশ উজবেকিস্তানে সার কারখানা স্থাপন নিয়ে ঢাকা ও তাসখন্দের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশটিতে যৌথ উদ্যোগে সার কারখানা করে তা আমদানি করবে বাংলাদেশ। নতুন কারখানার পাশাপাশি দুটি চালু কারখানা ও বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে চায় দেশটি।
দেশটিতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম বুধবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘উজবেকিস্তান প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ বিধায় গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত রাসায়নিক সার তারা বিদেশে রপ্তানি করে। এ দেশের গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে যৌথ বিনিয়োগে শিল্প স্থাপন করে উৎপাদিত সার বাংলাদেশে আনার বিষয়ে আলোচনা করতে সোমবার উজবেক বোর্ড অফ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়।
‘বৈঠকে দেশটিতে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এখানে জমি কিনে সার কারখানা স্থাপন করতে কোনো বাধা নেই মর্মে তিনি জানান। এ ছাড়াও তিনি এ দেশের ফারগানা ও কাসখান্দারিয়ায় অবস্থিত দুটি সার কারখানা শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দেন।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আমাদের সরকারের কাছে একটি ডিটেইলড রিপোর্ট প্রস্তুত করে পাঠাচ্ছি। তাসখন্দের প্রস্তাব পরীক্ষা করে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হলে উজবেকিস্তান হতে পারে আমাদের সার নিরাপত্তার অন্যতম সহায়ক।’
এদিকে চলতি বছরের ২৯ জুলাই বাংলাদেশ সফরে এসে সে দেশে সার কারখানা করার প্রস্তাব দেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী জামসেদ খোদজায়েভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, উজবেকিস্তানে কারখানা করে সার ভাগাভাগি করে নেবে বাংলাদেশ। দেশটির বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে এই সার উৎপাদন করা হবে। এ জন্য ঢাকাকে যৌথ বিনিয়োগ বা একক বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তাসখন্দ।
তিনি বলেন, ‘উজবেকিস্তান কৃষিতে উন্নত। আমরাও কৃষিতে ভালো। ওরা সার উৎপাদন করে। তাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভান্ডার আছে। এই গ্যাস ব্যবহার করে সার উৎপাদনের একটি প্রস্তাব এসেছে। এখন কীভাবে সেখানে সার কারখানা করে দেশে সার আনা যায় আমরা তাদের এই প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি।’
অন্যদিকে একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে একই প্রস্তাব দেন উজবেকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী জামশিদ আবদুরাখিমোভিচ খোদজায়েভ।
জামশিদ উজবেকিস্তান প্রজাতন্ত্রের বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম দুই পক্ষের আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের সরাসরি যোগাযোগের ওপর জোর দিয়েছেন। সে দেশে সার কারখানা করে দেশে সার আনার সম্ভাবনা ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের উজবেকিস্তানে যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে সার কারখানা স্থাপন করতে উৎসাহিত করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার বিস্তৃত হচ্ছে। এই শিল্প হলে আমরা কৃষিপণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারব।’
সরকারি নথি অনুযায়ী, দেশে বছরে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে ৭ লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে ৮ লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। ইউরিয়া সার ১০ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি হয়। টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারেরও বড় অংশ আমদানি করা হয়। এমওপির উৎস মূলত বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা।
সারের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য অনেক বেশি। তবে সরকার পরিবেশক বা ডিলারদের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে সার বিক্রি করে। সূত্র : টিবিএস