ডেঙ্গুর প্রভাবে ঢাকার কারওয়ান বাজারে কোটি টাকার ডাব বেচা-কেনা হচ্ছে
শাহীন খন্দকারঃ রাজধানীর কারওয়ান বাজার দেশের বৃহৎ পাইকারি ও খুচরা বাজার। এই বাজারে চুন থেকে খুনতিসহ নিত্যদ্রব্য, খাদ্য সবই পাওয়া যায়।
শুক্রবার (৪নভেম্বর) কারওয়ান বাজারে ডাবের হাটে কথা হয় চাঁদপুরের ডাব ব্যবসায়ি কালু সরকারের সঙ্গে।
কালু সরকার জানালেন তিনি চল্লিশ বছর পূর্বে চাঁদপুর থেকে বড় ভাইয়ের হাতধরে এসেছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের।
ডাব নিয়েই তার কারবারি। তিনি বলেন, রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কমবেশি ডাব আসলেও,বৃহৎ চালান আসে বরিশাল,ভোলা, খুলনার বাগেরহাটের, নোয়াখালী, ফরিদপুর, যশোরসহ ময়মনসিংহ থেকে ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ডাব বেচা-কেনা হচ্ছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় ডাব আসে ট্রাকে,কার্ভাডভ্যানে। তিনি বলেন কারওয়ান বাজারে প্রায় ২০ জন আরদদার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এখানে ডাব বিক্রি হয় শ’ হিসেবে, অর্থাৎ ১০০ বড় সাইজের ডাব পাইকারি বাজার ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা ধরে, মাজারি সাইজ ২০০০-২৫০০,ছোট সাইজ ১৫০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিদিন ৯০- ১লাখ ডাব বিক্রি হচ্ছে। আর এস ডাব বেচা-কেনা হচ্ছে রাজধানীর খুচরো বিক্রেতাদের নিকট। কালু সরকার অপর এক প্রশ্নর উত্তরে বলেন আমাদের আয় যেমন রয়েছে, তেমনি খরচ ও রয়েছে।প্রতি আরদদারকে কারওয়ান দোকান ভাড়া মাস শেষে গুণতে হচ্ছে ২০-২৫ হাজার টাকা । সেই সঙ্গে পরিস্কার পরিচ্ছন্নের জন্য টাকা দিতে হয়, রয়েছে নানা ধরনের চাঁদা। মাসের শেষে পুঁজিসহ সামান্য লাভ নিয়ে ঘরে ফেরা।
ডাবের এতো দাম কেনো প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের প্রধান খাদ্য এখন ডাব। একানেই ডাবের দাম বৃদ্ধি বলে জানালেন তিনি। পূর্বে বড় সাইজের ডাবের দাম ১০০পিচ ছিলো ১০০০-১৫০০ টাকা, মাঝারি সাইজ ছিলো ৮০০-৫০০ আর ছোট সাইজের দাম ছিল ৩০০-৫০০ টাকা ১০০ পিচ ডাবের দাম। ডেঙ্গুর রোগীবৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে দাম বেড়েছে।
শ্যামলী রিং রোডের ভ্যানে ডাব বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, বড় সাইজের একটি ডাব বিক্রি করছেন ১০০ -৮০ টাকায়, মাঝারি সাইজের একটি ডাব ৭০-৮০ ছোট সাইজের ডাব ৫০-৬০ টাকায়। ধানমন্ডি ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, সে ভ্যানে ফুটপাতে বিভিন্ন বড় বড় শোরুমে সামনে ডাব বেচা-কেনা চলছে আকাশ সোয়া দামে!
প্রতি পিছ ১৩০ থেকে ৮০ টাকার নিচে কোন ডাব পাওয়া যাচ্ছে না। ধানমন্ডি ১৫/এ শংকরে কথা হয় ডাব বিক্রেতা রুহুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন তার বিক্রি ২০০- ১৫০ পিচ।
তিনি ডাবের সাইজ বুজে দাম হাকেন, রুহুলের কাছে ৮০ টাকার নিচে কোন ডাব নেই। তবে রিকসা চালক ও ভিক্ষুকের নিকট একটি ডাবে ৫ টাকার বেশি লাভ করেন না। তবে বড়লোক ও রাজনীতিবিদের নিকট ডাব বিক্রিতে তিনি লাভের অংশ ছেড়ে বিক্রি করেন না! প্রতিপিচ ডাবের দাম ১২০-৮০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। তবে ১০০ ডাব কতো টাকা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন যেমন কেনা তেমনি বিক্রি।
রুহুল প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন,আপনারা আমর কেনো দাম বেশী নিচ্ছি ? ফুটপাতের ভারা দিতে হয়, পুলিশসহ মহল্লার ক্ষমতাশিল রাজনৈতিক নেতা বড় ভাইকে বখড়া দিতে হয় আমাদের! আর একারণেই দাম বেশী! কারণ বাড়িঘর বিক্রি করেতো দিতে পারবো না। তাই ক্রেতাদের কাছে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তৌফিক হোসেন। তিনি একটি এনজিও-র উর্ধতন কর্মকর্তা। অফিসের কাজে গিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে, সেখান থেকে ঢাকায় ফিরেই তার জ্বর।
তিনি ইবনে সিনাতে পরীক্ষা করাতে এসে জানতে পারেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ৩ ডজন ডাব কিনে বাসায় ফিরছেন। কারন একটু পরপরই ডাব খেতে বলেছেন চিকিৎসক। কারণ সম্পর্কে তিনি জানান ডেঙ্গু জ্বরের কোন মেডিসিন নেই।রেস্ট আর ডাবের পানির বিকল্প কিছুই নেই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এমিরেটস প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা.এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডাবের পানিতে মিনারেল ওয়াটার,পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হৃৎপিন্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং হৃৎপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ডাবের পানিতে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টি-এজিংপ্রপার্টিস থাকে।
তিনি আরো বলেন, বøাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা বøাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডাবে আছে কার্বোহাইড্রেড যা শক্তি বাড়ায়। এবং শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করে। ডাবের পানি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমে আসে। ফলে কম খাওয়া হয়। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডাবের পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা আমাদের পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। হজমশক্তি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া নিয়মিত ডাবের পানি খেলে অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।