শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেন কমেছে
মাসুদ মিয়া: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে টানা চার কার্যদিবস সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। মূল্যসূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি দুই বাজারেই যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, তার থেকে কমেছে বেশি। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে (দাম কমার সর্বনি¤œ সীমা) আটকে রয়েছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতদিন ফ্লোর প্রাইসে কোম্পানির সংখ্যা ছিলো ২৫০ এরও বেশি। সেখান থেকে ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে ফ্লোর প্রাইসের আটকে থাকার শেয়ারের সংখ্যা। এতে করে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে কিছুটা আশার সঞ্চার হচ্ছে। প্রত্যাশা বাড়ছে ফ্লোর প্রাইসের শেয়ারগুলো নিয়েও।
ফ্লোর প্রাইস থেকে শেয়ারগুলোর উর্ধ্বমূখী প্রবণতা মার্জির ঋণে শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীদের রক্ত ক্ষরণের কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনের করছে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিন বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোরে আটকে থাকার কারনে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী পুঁজি নিয়ে আটকে ছিলো। এতে করে ইচ্ছে করলেও অন্য কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেনি। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস থেকে বের হওয়ার কারণে অনেকেই এখন অন্য শেয়ারে এন্ট্রি নিচ্ছে। এতে করে বাজারে লেনদেনের পাশাপাশি সূচকেও বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বড় হয় দরপতনের তালিকা। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে দরপতনের তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৪৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। বিপরীতে দাম কমে ৯৮টির। আর ২০৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেনেক্স ইনফোসিস, অরিয়ন ফার্মা, ইস্টার্ন হাউজিং, আইটিসি, বসুন্ধরা পেপার, নাভানা ফার্মা, লুব-রেফ, বিএসসি, জেএমআই হসপিটাল ও আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেনেক্স ইনফোসিস, নাভানা ফার্মা, আইটিসি, অগ্নী সিস্টেম, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লুব-রেফ, তৌফিকা ফুড, জেএমআই সিরিঞ্জ ও ইস্টার্ন ক্যাবলস।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ডোরিন পাওয়ার, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যান ইন্স্যুরেন্স, গেøাবাল ইন্স্যুরেন্স, বিএসসি ও সামিট অ্যালায়েনাস পোর্ট।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৩৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৫টির এবং ১২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।