যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ
* জন কেরির সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
রিমন মাহফুজ, শার্ম আল শেখ ( মিশর) থেকে : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নবায়ণযোগ্য জ্বালানি গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া দেশটির মিথেন গ্যাস কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগেও শামিল হয়েছে ঢাকা। তবে এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণী সম্পদের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাইডেন প্রশাসনের এমন মনোভাবের কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।
গতকাল মঙ্গলবার মিশরের শার্ম আল শেইখে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের ১০তম দিনে আমেরিকা প্যাভিলিয়নে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জন কেরির উষ্ণ অভ্যর্থনায় আলোচনার শুরুতেই আসে গত সোমবার গঠিত গ্লোবাল শিল্ডের প্রক্রিয়া। সেখানে যুক্ত হওয়ার জন্য মোমেনকে ধন্যবাদ দেন কেরি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন কেরি। মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির কথাও জানানো হয়। এছাড়া অন্য বড় দেশগুলোকেও যুক্ত করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায় দেশটি।
বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে যে আলাপ হলো, আমি ওনাকে বললাম, আমাদের লস এ্যান্ড ড্যামেজ এজেন্ডায় তোলায় তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি। আমি বলেছি, আমাদের দেশে সাড়ে ছয় লাখ লোক প্রতিবছর বাস্তুচ্যুত হয় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে। উনি চেয়েছিলেন, আমরা যেন বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকারে যুক্ত হই। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা যুক্ত হয়েছি। আমাদের মিথেনের পরিমাণ কমাতে হবে। কিন্তু এর কারণে আমাদের কৃষি ও প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হবে। সেজন্য আপনাদের কারিগরি সাহায্য দরকার। উনি বললেন, আপনাদের কি ধরনের সাহায্য লাগবে আমাদের জানান। মিথেন অঙ্গীকারের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের জন্য ৪৩০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ করেছি। সুতারং আমি সমাধান পেয়েছি। উনি আমাদের কৃষি জোটে যুক্ত হওয়ার জন্য বলেছেন। আমরা যুক্ত হয়েছি। উনারা আমাদের দেশে পাওয়ার গ্রিডে সহযোগিতা করছে; সেটি নবায়ণ যোগ্য জ্বালানির জন্য। মোমেন বলেন, আমি বলেছি অ্যাডাপ্টেশন যথেষ্ট নয়। আমরা অ্যাডাপ্টেশন করেছি এবং যথেষ্ট ভালো করেছি। এর আগে উনাকে একটা প্রকল্পের কথা বলেছিলাম, দূর্যোগপ্রবণ ৪৩২ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ উচু ও চওড়া করতে চায়। উনারা একটি কারিগরি দল পাঠিয়েছিলেন।
তারা কারিগরি দিক যাচাই করছেন। আমি বলেছি, উন্নত ২০টি দেশ বিশ্বের ৮০ ভাগ কার্বণ নিগর্মন করে। উনি বললেন, ইউ আর রাইট। উনি বললেন, যতো কার্বণ নিগর্মন হয়, তার মধ্যে ৩৫ ভাগ কয়েকটি দেশ করে। এর মধ্যে ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া অন্যতম। কেরি বললেন, তারা রেডি। আমেরিকা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে রাখতে প্রকল্প নিয়েছে। আমাদের সঙ্গে ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের কয়েকটি দেশও যুক্ত হয়েছে। ইউকে যুক্ত হয়েছে, সম্প্রতি আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় দেশটিকে আহ্বান জানিয়েছেন। উনি বললেন, বাকি যে দেশগুলো আছে তাদেরকে বলেন। আমি বললাম, আমাদের জন্য কিছু বলা কঠিন। উনি বললেন, আপনার ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সম্মিলিতভাবে বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন গ্রিডে আমরা যুক্ত হয়েছি। আমেরিকা আমাদের সাহায্য করছে নবায়ণযোগ্য এনার্জি গ্রিডে। সদস্য কারা জানতে চাইলে বলেন, সদস্য কারা এখনো জানিনা। আমেরিকা আমাদের অনুরোধ করেছে। আমরা যুক্ত হয়েছি।
এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এক আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশের ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটা সারাবিশ্বের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি। তিনি বলেন, আজকে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত। বিভিন্ন হিসেবে দেখা গেছে, এ সংখ্যা ২ কোটিতে গিয়ে পৌঁছাবে।