শিল্পীরা যে মানুষ সেই স্বীকৃতিই আমরা এখনো পাইনি : কনক চাঁপা
অর্থনীতি ডেস্ক : জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী কানক চাঁপার ছেলে ফাইজুল ইসলাম খান মাশুকের জন্মদিন ছিলো ১৫ নভেম্বর। ছেলের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কানক চাঁপার তার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে। আর সেখানেই তিনি বাংলাদেশের শিল্পীদের যে করুণ পরিস্থিতি সেটাই তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছে- আজ তোমার জন্মদিন। এদিন তোমার জন্য আমি ও মা হিসেবে পৃথিবীর বুকে গর্বিত সম্মানিত মায়ের খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছিলাম। তোমার মতো শান্তশিষ্ট সুবোধ সন্তান আমি আর কখনো দেখিনি।
সবাই বলতো, তুমি তোমার বড় চাচীর বাচ্চা। কারণ আমার মতো শ্যামলা মায়ের কোলে তোমার মতো দেবশিশু মানায় না। আমি মন খারাপ করে থেকে আবার একসময় তা ভুলে গেছি। সে অন্য অধ্যায়।
কিন্তু আমার খুব অপরাধবোধ কাজ করে এজন্য যে, আমি হাতে ধরে তোমাকে শিল্পী বানাইনি। তোমার কণ্ঠ, তোমার উচ্চারণ, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবই শিল্পীত, বিশেষ করে ইংরেজি যখন গান গাও, তখন আমারই বিশ্বাস হয় না তুমি বাংলাদেশী।
কিন্তু আমি এবং তোমার বাবা কখনো চাইনি শিল্পী হতে গিয়ে যে স্ট্রাগল আমরা করেছি এমন স্ট্রাগল তুমি, ফারিয়া আর করো! এটা ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে তা ভবিষ্যৎই বলবে। তবে আমরা তোমাকে, ফারিয়াকে মুক্ত স্বাধীন শিল্পী হিসেবে দেখতে চেয়েছি। পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান বিক্রি না করে মনের শখে গাও, এটা হয়তো ভালোই। যা কিছু হোক আমরা আসলে তোমার ভালো চেয়েছি এতে কোন সন্দেহ নাই।
বাবা, আমাকে ভুল বুঝো না। এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা।
এখানে প্রতিভার কোন দাম নেই, নেই শিল্পীর কদর, সম্মান, যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা, শিল্পীরা যে মানুষ সেই স্বীকৃতিই আমরা এখনো পাইনি। আমাদের না আছে, কপিরাইট আইনের সঠিক প্রয়োগ, না আছে রয়ালটি, না আছে যথাযথ সমবন্টন।
যে যেভাবে পারছে কামড়ে খামছে। দৌড়ে গিয়ে কাজ ধরছে। সঙ্গীত জগৎ হয়েছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি আর প্রোগ্রাম হয়েছে ক্ষ্যাপ। সেখানে তোমাকে এই অনিশ্চিত জগতে ছেড়ে দিতে পারি না।
তুমি তোমার মনের সুখে গলা খুলে গাও। শিল্পীর সবচেয়ে দরকার মানসিক স্বাধীনতা। ইচ্ছে হলে গাইবে ইচ্ছে হলে গাইবে না। আমি যেদিন থাকবো না সেদিন তুমি আমার সব কথার মানে পুরোপুরি বুঝবে। আব্বু তোমাকে অনেক ভালোবাসি। যেমন তুমি ভালোবাসো খাদিজা আমিনাকে। শুভজীবন আব্বা। আল্লাহ তোমাকে নেক, সুদীর্ঘ হায়াত দিন, সুখী সম্বৃদ্ধ জীবন দান করুন।