আনু মোহাম্মদ
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের জন্য আহাজারি করছেন। কিন্তু এই খাতে সর্বজন স্বার্থবিরোধী যেসব চুক্তি ও অপতৎপরতার ফলে আজ এই দশা, তারা সেগুলোর বিরুদ্ধে কখনও মুখ খোলেন নাই, বরং এদের প্রভাবশালী অংশ তা থেকে নানা সুবিধা নিতে চেষ্টা করেছে। যেমন গ্যাস রপ্তানির উদ্যোগ, তাতে এফবিবিসিআইএর নেতারাই লোকাল পার্টনার হিসেবে তখন এর পক্ষে প্রচার করেছেন। মার্কিন দূতাবাস- বিশ্বব্যাংক- এডিবি- আমলা- মন্ত্রী- মিডিয়ার পাশাপাশি এদেরকেও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে।
জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই গ্যাস রপ্তানির মহা আয়োজন যদি আমরা বন্ধ করতে না পারতাম আজ যা বিদ্যুৎ আছে তার অর্ধেকও থাকতো না, শিল্প কারখানায়ও গ্যাস পাওয়া হতো না। টাটা যেভাবে গ্যাস ও কয়লাখাত নিয়ে চুক্তি করতে চেয়েছিল তা হলেও আজ বিপদ আরও বেশি থাকতো। আমরা শতভাগ দেশের কাজে গ্যাস ব্যবহারের কথাই বলেছি সবসময়।
গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতার কথা সেজন্য আমরা বহুবছর ধরে বলছি। ব্যবসায়ীদের কোনো সংগঠন এবিষয়েও কথা বলে নাই। এটা হলে আজ ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির পথে গিয়ে এই দশা হতো না। কঠিন শর্তে কুইক রেন্টাল চুক্তি করে বারবার তার মেয়াদ বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে। কয়েকটি গোষ্ঠী বিদ্যুৎ না দিয়েও হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। আমরা বরাবর এগুলোর বিরোধিতা করে এই অর্থ জ্বালানি খাত উন্নয়নে ব্যয় করতে বলেছি। আর ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে এগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে কেউ কেউ বরং এর ভাগ নিতে চেষ্টা করেছেন। তারা মুনাফার লোভে সরকারের ব্যয়বহুল, ঋণনির্ভর, প্রাণঘাতী, জনবিরোধী পথের শরীক হতে চেয়েছেন, তারা বিদেশি কোম্পানির লোকাল পার্টনার হতে চেয়েছেন। লাভের ভাগ পেয়েছেনও কেউ কেউ।
দেখাই যাচ্ছে এই পথে, গোষ্ঠীস্বার্থে সরকারের নেয়া যথেচ্ছাচার পদক্ষেপের সঙ্গী হয়ে, কিছু লোক লাভবান হতে পারে কিন্তু অনেক শিল্প বা ব্যবসার উদ্যোক্তাদেরও পথে বসতে হয়। দেশ তো বিপন্ন হয়ই।