জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি আয়কর ১% থেকে বাড়িয়ে ৩.১% করা সম্ভব বৈষম্য কমানোর প্রধান উপায় প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো
সোহেল রহমান : ক্রমবর্ধমান বৈষম্য আয় কমাতে প্রত্যক্ষকর বাড়াতে হবে। এটি প্রধান উপায় হবে। এ ক্ষেত্রে সব করযোগ্য ব্যক্তিরা আয়কর ¯øাব অনুযায়ী কর প্রদান করলে জিডিপি’র অনুপাতে বর্তমানে ১ শতাংশ ব্যক্তি আয়কর বাড়িয়ে ৩.১ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হবে। এ জন্য নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। একইসাথে কর অব্যাহতি সুবিধা বাদ দিলে জিডিপির অনুপাতে আরও ২ শতাংশ কর বাড়ানো সম্ভব।
শনিবার ‘ বৈষম্য মোকাবেলা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষকর প্রয়োগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এমন তথ্য তুলে ধরেছে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড)। র্যাপিড এবং ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের কর জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশ, যা সারা বিশে^ সর্বনি¤œ। এর বড় কারণ প্রত্যক্ষ কর অনেক কম। এটা বাড়াতে হবে। বর্তমানে পরোক্ষ কর ৬৫ শতাংশ এবং প্রত্যক্ষ কর ৩৫ শতাংশ। তবে সরকার আগামী দিনে প্রত্যক্ষ কর ৭০ শতাংশ ও পরোক্ষ কর ৩০ শতাংশে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুটি সমস্যা ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং সরকারি ব্যয় জিডিপি’র অংশ হিসাবে অনেক কম। এর বড় কারণ প্রত্যক্ষ কর কম। যদিও টাকার অংকে প্রত্যক্ষ কর আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে জিডিপি’র অনুপাতে ও পরিমানের দিক থেকে বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। ভারত, ভূটান, মালয়েশিয়াসহ বিশে^র প্রায় সব দেশে প্রত্যক্ষকর থেকে সরকারের আয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। যদিও দেশের যারা গরিব মানুষ তাদের আয়ের অনুপাতে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দেয়। আর বেশি আয়ের মানুষ সবচেয়ে কম ভ্যাট দিচ্ছে। র্যাপিড চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও উন্নত দেশে যেতে হলে জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২১ শতাংশ করতে হবে। আর এর উল্লেখযোগ্য অংশ প্রত্যক্ষকর থেকে আসতে হবে। বর্তমানে কর নেট অনেক কম। টিনধারী ৭.৬ মিলিয়ন থাকলেও ২.৪ মিলিয়ন রিটার্ন দাখিল করছে। এর মধ্যে নামমাত্র সংখ্যক কর দেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে দিতে পারে সরকার। কারণ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি আছে। এর পরেও সবার কাছ থেকে ব্যক্তি আয়কর জিডিপির অনুপাতে ৩ শতাংশের বেশি অর্জন সম্ভব হবে। আবার কর্পোরেট কর জিডিপির অনুপাতে মাত্র ১.৪ শতাংশ। বর্তমানে ২ লাখ ৭৩ হাজার নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ বা ৩০ হাজারের মতো কোম্পানি কর দেয়। এ ক্ষেত্রেও অনেক ঘাটতি রয়েছে। আর অনেকের সম্পদ থাকলেও মাত্র ১৫ হাজার লোক সম্পদের সারচার্য দেয়। এটা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, করের আওতা বাড়ানোর এমন একটি পদ্ধতি আনতে হবে যেটা দিয়ে আয় বাড়াবে। যেমন বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সোস্যাল ইন্সুরেন্স নাম্বার চালু করলে আয়-ব্যয়সহ করের হিসাব রাখা সহজ হবে। এতে কর আদায় বাড়াবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো উচিত। তবে ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষকর বৃদ্ধি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ এনবিআরের কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। রাজণৈতিক অর্থনীতির কারণে এনবিআর রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে আছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে এখন বড় বাধা রাজনৈতিক অর্থনীতি। কারণ অনেক খাতেই কর অবকাশ সুবিধা দিতে হচ্ছে। বিশেষ কর হার আরোপ করতে হচ্ছে। তাছাড়া সংসদ সদস্যদের অনেকেই ব্যবসায়ী হওয়ায় তারাও কর ছাড়ের সুবিধা নিতে চাইছে। এসব কারণে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকা কর ছাড় দিতে হচ্ছে।