
বিশ্বের নিরিখে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো ভাল

বিশ্বজিৎ দত্ত : বৈশ্বিক বিচারে দেশের অর্থনীতি এখনো ভাল আছে। কিছু পর্যবেক্ষক দীর্ঘমেয়াদী পরিসরে অর্থনীতিতে নিরাশাব্যাঞ্জক ছবিকে দেখতে পেলেও। বাস্তবে বৈদেশিক মূদ্রা বিনিময়ের জন্য অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে আগামী ৬ মাসের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তুলনামূলক ভাল প্রবৃদ্ধিতে থাকা ভারতের আমদানি ব্যায় মিটানোর অর্থ রয়েছে ৮ মাসের। ইতিমধ্যে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার জন্য প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। এটাও বলা দরকার ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাসেও বাংলাদেশ অনেক কম মান হ্রাস করেছে।
মূল্যস্ফীতির হিসাবেও ইউরোপ আমেরিকা, জাপান বা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে এখনো কম মূল্যস্ফীতি। কেন্দ্রেীয় ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন মুল্য স্ফীতি সাড়ে ৯ ইউরোপে ২ অংকের মূল্যস্ফীতি হয়েছে গত কয়েক কয়েকমাস আগেই। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বকালের রেকর্ডমূল্যস্ফীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে শুধুমাত্র ৬.৭৭শতাংশ।এরবাইরে গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলংকায় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯.৮০ শতাংশ। কিন্তু অক্টোবরেই তাদের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯.৮০ শতাংশে। নেপালে মূল্যস্ফীতি ৮.৫০শতাংশ। গত বছর এই সময়ে নেপালে তা ছিল ৪.২৪ শতাংশ। পাকিস্তানে ১৮৪.৪১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। অন্যান্য দেশ যেখানে ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার না বাড়িয়ে আমদানি মনিটরিং করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এই কাজে একইভাবে সরকারের শুল্কবিভাগ অপ্রয়োজনীয় আমদানির উপর শুল্ক ছাড় ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে দেখলে শুধুমাত্র ভারতে ৭ মাত্রার উপরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর বাইরে ইউরোপের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি নাই। শ্রীলংকার প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ। নেপালে প্রবৃদ্ধি কমে সাড়ে সাড়ে ৪ শতাংশের ঘরে। চীনের প্রবৃদ্ধিও অর্ধেকে নেমে এসছে। সেখানে বাংদেশে এখনো ৭শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। যদি ২০১৮সালে দেশের প্রবৃদ্ধিও গতি ছিল ৮ শতাংশের উপরে। এই হিসাবেও তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক মন্দার এই সময়েও বাংলাদেশের জাতীয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০ ডলার। বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ৩০০০ ডলারের কাছাকাছি। মধ্যআয়ের দেশ হিসাবে ৪০০০ ডলার শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
দেশে খাদ্যঘাটতিও খুব নিরাশার নয়। এবারে আমনের ভাল ফলন হয়েছে। দেশের মোট চাহিদা ৩ কোটি টন চাল উৎপাদন হয়েছে। তার পরেও আরো ২০ লাখ টন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানিতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ব্যবসায়িক কারসাজির কারণে এ দুটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক এনবিআর সদস্য আমিনুর রহমান মনে করেন,বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের ৮০ ভাগ কাঁচামাল আমদানি হয় চীন ও ভারত থেকে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের প্রধান ম্যানুফ্যাকচারিং গার্মেন্টের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না। আবার কম মূল্যের পোশাকের জন্য ইউরোপ আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা থাকবে। তবে তিনি জানান, ইউরোপ ও আমেরিকায় তৈরী পোশাকের উপর প্রায় ২৫শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপ করেছে। তাতে পোশাক খাত থেকে দেশে আসা বৈদেশিক মূদ্রা ২৫ শতাংশ কমতে পারে।
তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অনেক বিদেশি পুজি চলে যেতে পারে। কারণ বিনিয়োগকারীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রেই বিনিয়োগ করতে চাইবে। তিনি মনে করেন, এই অবস্থা চলমান থাকলে সরকার যদি সুষ্ঠু বাজার মনিটরিং না করে বা মূদ্রা পাচার বন্ধ না করতে পারে তবে দীর্ঘ মেয়াদে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
