দুই কার্যদিবস পর উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার পরপর দুই কার্যদিবস পতনের পর গতকাল মঙ্গলবার উত্থানে ফিরেছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে না বলে বিনিয়োগকারীদের অভয় দেওয়ার পর বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমরা আপাতত এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। যারা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো গুজবে যেন বিনিয়োগকারীরা কান না দেয় সেজন্য সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহŸান জানান তিনি।
এদিকে টানা পতনের কারণে শেয়ারবাজারের নানান দিক নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের সাথে বৈঠক করেছে শীর্ষ ব্রোকারদের মধ্যে কয়েকজন প্রধান নির্বাহী। বৈঠকে ব্রোকারগুলোর প্রধানদের বিএসইসির চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন দ্রæত সময়েই ঘুরে দাঁড়াবে শেয়ারবাজার। বিএসইসির চেয়ারম্যানের এমন শান্তনার পরের দিনই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার।
বিএসইসির চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠকে উঠে আসে যেসব সঙ্কটকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারে পতন চলছে, সেসব সঙ্কট ইতোমধ্যে কেটে যেতে শুরু করেছে। সঙ্কটগুলোর মধ্যে ডলার সঙ্কটকাটতে শুরু করেছে। বিদ্যুতের যে সঙ্কটছিল তা এখন অনেকটাই কেটেছে। আর এই সঙ্কটগুলোই শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু এই সঙ্কটগুলো কাটতে শুরু করেছে, তাই খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে এই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯.৫২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৩০.৫০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১২.৫০ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১২.৭৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৫৫.৫০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৯০.২০ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৪২৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৭৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৩৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকার।
ডিএসইতে ৩১৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৮টির, শেয়ার দর কমেছে ৬টির এবং ২২৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিকন ফার্মা, সোনালী পেপার এবং ওরিয়ন ফার্মা এই তিন কোম্পানি ডিএসইতে সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে। এই তিন কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির ফলে ডিএসইর সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট। যা শতাংশের হিসেবে ২০ শতাংশের বেশি।
এছাড়াও রয়েল টিউলিপ সি পার্ল, নাভানা ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, অলিম্পিক ইন্ডান্ট্রিজ, ইস্টার্ন হাউজিং, জেনেক্স ইনফোসেস এবং জেএমএআই হসপিটাল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় ২৪ পয়েন্ট বেড়েছে সূচক। এই দশ কোম্পানির পাশাপাশি বিমা ও আইটি খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল জেনেক্স ইনফোসেসের শেয়ার। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। তৃতীয় স্থানে ছিল পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। এরপরের অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, নাভানা ফার্মা, রয়েল টিউলিপ সি পার্ল, ইস্টার্ন হাউজিং, সামিট অ্যালায়েন্স, প্রগতি লাইফ এবং ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের শেয়ার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫০.৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৩.১৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৪৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫টির আর ৭৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।