উচ্চমূল্যরে ফুল টউিলপিরে গবষেণায় ভাল ফলরে আশা বাংলাদশেরে বজ্ঞিানীদরে
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান একটি দেশ। তবে কিছু কিছু সমাদৃত কৃষি পণ্যের বাজার বিশ্বব্যাপী থাকলেও আবহাওয়া এবং পরিবেশগত কারণে সেটা বাংলাদেশে জন্মানো সম্ভব হতোনা। তেমনই একটি ফুলের নাম টিউলিপ। তবে কয়েক বছর হয় বাংলাদেশের কিছু কিছু স্থানে এটিউলিপের আবাদ দেখে অনেকের মনে টিউলিপ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। টিউলিপ এখনো বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় না। তবে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চমুল্যের এফুলের জাত উদ্ভাবন ও বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি(এনআইবি)’র উদ্যোগে একটি গবেষণা প্রকল্প অব্যহত রয়েছে। ২০২১ সালে এপ্রকল্পটি শুরু হয়।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের উপপরিচালক (গণযোগাযোগ) ড. শামীম আহমেদ আরও জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর প্রচেষ্টায় ২০২১ সালে নেদারল্যান্ডের এক টিউলিপ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাওয়া এক হাজার একশত (১১০০) বাল্ব নিয়ে তিনি প্রথম তার ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’ নামের খামারে এফুলের চাষ শুরু করেন। এবারও তিনি পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপের চাষাবাদ করেছেন। এছাড়াও বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীতে মো. ইসমাইল হোসেন পাঁচশতক জমিতে এবার টিউলিপের আবাদ করেন। দেশের শীতার্ত অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়েও কেজিএফ এর সহায়তায় টিউলিপের আবাদ হয়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শারিয়াল জোত ও দর্জিপাড়া গ্রামে প্রথম উদ্যোক্তা পর্যায়ে শুরু হয়েছে টিউলিপের আবাদ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশেও টিউলিপের আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন দরকার সরকারি উদ্যোগ, কারিগরি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সহায়তা। টিউলিপের চাষ ব্যবস্থাপনা সাধারণ ফসলের চাষ ব্যবস্থাপনা হতে কিছুটা ভিন্ন।
টিউলিপ বসন্তে প্রস্ফুটিত বহুবর্ষজীবী, যা বাল্ব থেকে জন্মায়। প্রজাতির বৈচিত্র্যের ওপর নির্ভর করে, টিউলিপ গাছ ১০ সেন্টিমিটার থেকে ৭০ সেন্টিমিটার উচ্চতার মধ্যে হতে পারে। যখন এটিতে ফুল আসে, তখন সাধারণত ৬টি পাপড়িসহ একটি কাপ বা ডিমের মতো আকৃতির হয়। টিউলিপ ফুলের পাপড়ি বিভিন্ন ধরণের বা প্রজাতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্যাটার্নসহ একক রঙ থেকে বহু রঙের হয়ে থাকে। টিউলিপ ফুল কমলা, গোলাপী, চেরি, ম্যাজেন্টা, স্যামন, ক্রিমসন, বেগুনি, এপ্রিকট, লিলাক, মাউভ, নীল, হলুদ, ভায়োলেট, পোড়ামাটির মতো অনেক রঙ লাল, স্কারলেট, চকোলেট, বাদামী অনেক শেডসহ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।
সারা বিশ্বে টিউলিপের অনেক উন্নত জাত থাকলেও মূলত টিউলিপের তিনটি শ্রেনি রয়েছে। প্রারম্ভিক ফুল আসা টিউলিপ, মাঝামাঝি ফুল আসা টিউলিপ, দেরিতে ফুল আসা টিউলিপ। ভারতে প্রাথমিক ফুলের টিউলিপের প্রধান জাতগুলো হলো; সিঙ্গেল আর্লি, ডাবল আর্লি, ডুক ভ্যান টোল এবং মিড সিজন টিউলিপ; বিজয় ও মেন্ডাল। শেষ ঋতু টিউলিপের জাতগুলো হল হাইব্রিডাইজ, লিলি ফুলযুক্ত, রেমব্রান্ট, বিজব্লোমেন, ডাবল লেট, প্যারটস, ডারউইন এবং ডারউইন হাইব্রিড। টিউলিপা স্টেলাটা এবং টি. আইচিসোনি হিমালয় অঞ্চলে জন্মে।
টিউলিপ সম্পূর্ণ রোদে বা আংশিক ছায়ায় জন্মানো যায়। তবে টিউলিপের বৃদ্ধি ও গুণাগুণ অব্যহত রাখতে দিনের তাপমাত্রা দরকার ২০-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাতে ৫ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে সরাসরি সূর্যের আলো উপযোগী হলেও মধ্যাহ্নের সময় (১২টা থেকে ৪টা) আংশিক ছায়া দরকার। টিউলিপ তুষারপাতের ক্ষেত্রে যেমন খুব সংবেদনশীল তেমনি গরম জলবায়ুতে টিউলিপ বাড়ানো একটু কঠিন। সেক্ষেত্রে টিউলিপ ফুল জন্মানোর জন্য গ্রিনহাউজ এবং পলিহাউজের মতো সুরক্ষিত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী।
সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে সেচের পানির সুনিষ্কাশিত জমিতে টিউলিপ বাল্ব ভালও জন্মে। তাই টিউলিপের ভাল বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য সুনিষ্কাশিত হালকা বেলে দোআঁশ মাটি দরকার। ভারী মাটির ক্ষেত্রে, ভাল পচনশীল কম্পোস্ট বা পিট মস বা অন্যান্য জৈব পদার্থ যোগ করলে ফসল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বাণিজ্যিকভাবে জন্মানো টিউলিপের জমির উর্বরতা নিশ্চিত করতে মাটি পরীক্ষা করা খুব জরুরি। মাটির পিএইচ ৬.০ থেকে ৭.০ অর্থাৎ কিছুটা অম্লিয় থেকে নিরপেক্ষ মাটি বেশি উপযোগী। মাটিকে সূক্ষ্মভাবে চাষ দিতে এবং আগাছা অপসারণ করে জমি তৈরি করতে হয়।
টিউলিপ বাল্বলেট ও বাল্প দিয়ে বংশবিস্তার করে থাকে। বীজ দিয়েও বংশবিস্তার করা সম্ভব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০-১৮০০ মিটার উঁচু এবং মাঝারি থেকে মাঝারি উঁচু জমিতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ মিটারের বেশি উচ জমিতে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর হতে ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাল্ব লাগানোর আদর্শ সময়। আংশিক ছায়া ফুলের দীর্ঘায়ুর জন্য উপকারী। একটি ভালও মানের টিউলিপ গাছ পেতে ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার আকারের বাল্ব রোপণ উপাদান হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত। টিউলিপ ফুল সাধারণত মধ্য-পাহাড় অঞ্চলে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং উঁচু-পাহাড় অঞ্চলে এপ্রিল-জুনে ফোটা শুরু করে।
টিউলিপ ফুলের জাত ও আকারভেদে এর ফলন ভিন্ন হয়ে থাকে। নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে টিউলিপের আধুনিক চাষাবাদ ব্যাপক ভাবে হচ্ছে। সেখানে শতভাগ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফুল ও বাল্ব সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত ফুল সরাসরি মাঠ থেকে প্যাকেটজাত করে চলে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন ফুল বাজারে। বাংলাদেশেও এটিউলিপ আবাদের যে সম্ভাবনা ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে তা আরও সম্প্রসারণের জন্য এই ফুলের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে অনেক গবেষণা দরকার।
বর্তমানে গবেষণা প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি(এনআইবি)’র প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শামিমা নাছরীন বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এফুলের উপযোগিতা মুল্যায়নের কাজ চলছে। গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে বহু ধরনের টিউলিপের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। গবেষনার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করা যায়, ভাল ফল পাওয়া যাবে। এগবেষণা প্রকল্পের প্রথম দিকের দায়িত্বে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুন নুর মুহাম্মাদ ইফতেখার আলম বলেন, আমার সময়ের গবেষণায় খুব একটি এগোনো যায়নি। এদেশে টিউলিপের চাষ টেকসই হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছেনা।