ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের ট্রেডলাইন্সের নামে হয়রানি করা যাবে না : শিল্প প্রতিমন্ত্রী
এস.ইসলাম জয় : শিল্প প্রতিমন্ত্রীর কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের ট্রেডলাইন্সে প্রদানে ও ব্যাংক লোন দেয়ার নামে হয়রানি করা যাবে না। এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা সহজ করতে হয়রানি কমানোর তাগিদ দেন তিনি। মঙ্গলবার এসএমই ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এবার অন্যবারের তুলনায় ৩ দিন বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ৩ ডিসেম্বর। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১০ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশই নারী।
এ মেলা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হবে। এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন থাকবেন। সভাপতিত্ব করবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য এনায়েত হোসেন চৌধুরী। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিতব্য শতভাগ দেশী পণ্যের এই মেলায় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৫০টি স্টলের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি সেক্রেটারিয়েট, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ রাখা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বিটাক, বিএসটিআই, বিসিআইসি, বিসিক, বিএসইসি, জেডিপিসি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংক, গোল্ডেন স্পন্সর ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও লংকা বাংলা, সিলভার স্পন্সর, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং জেনারেল স্পন্সর কৃষি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্টল থাকবে।
জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ অনুযায়ী উচ্চ অগ্রাধিকার বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত কৃষি অথবা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাট ও পাটজাত, প্লাস্টিক, হস্ত ও কারু শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত এসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহকে মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। দেশীয় উৎপাদনকারী অথবা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাই মেলায় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। শতভাগ দেশী পণ্যের সবচেয়ে বড়ো এই আয়োজনে বিদেশী বা আমদানিকৃত পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিক্রয় করা যাবে না। এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় অংশ নিচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইন খাতের সবচেয়ে বেশি ১৩০টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া খাদ্য বা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ৪৫টি, হস্ত ও কারু শিল্পের ৩৮টি, চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৬টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, আইসিটি পণ্য-সেবার ৮টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ৬টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৩টি, প্লাস্টিক পণ্যের ৫টি প্রতিষ্ঠান এবার অংশ নিচ্ছে মেলায়। ১০ দিনের মেলার পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, নারী-উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি, আইসিটি ও ক্লাস্টার উন্নয়নের ওপর আয়োজন করা হবে ৫টি সেমিনার।
দেশব্যাপী এসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-উদ্যোক্তাগণ অনেক উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করলেও বিপণন প্রক্রিয়ার যথার্থ জ্ঞানের অভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাজার সংযোগ ও সস্প্রসারণ জরুরি। বাংলাদেশি এসএমই উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদানে বহুমুখী বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের গুরুত্ব বিদ্যমান। এসএমইদের পণ্য বিপণনের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য ফাউন্ডেশন পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদান করে। যার অংশ হিসেবে রূপে এসএমই ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিক্রয় এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাজার সম্প্রসারণ মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। এসএমই উদ্যোক্তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন, যোগাযোগ এবং সেতুবন্ধন তৈরিতে সহায়তা, ভোক্তা এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের পারস্পরিক সংযোগ স্থাপন এবং সেমিনার বা মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভোক্তাসহ বিভিন্ন মহলের সৃজনশীল মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ প্রভৃতিও মেলার উদ্দেশ্য। এছাড়া এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে পুরুষ ও নারী ক্যাটাগরিতে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২২ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এ বছর পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ৬ জন উদ্যোক্তাকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হবে। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত ৯টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা প্রায় ৩২.৮৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় এবং প্রায় ৫৩.৫০ কোটি টাকার অর্ডার গ্রহণ করে। এছাড়া সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভাগ ও জেলায় ১২৬টি আঞ্চলিক-বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলার আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।