বাটপারে ভরে গেছে দেশ এরই নাম উন্নয়ন
হাসান মামুন : চাষের মাছ দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেই চলবে? এসবের স্বাদের যা অবস্থা, তাতে তো মনে হয় সবজি খাওয়াও ভালো। বেগুন ভাজি, আলু ভর্তা কিংবা একটা ডিম ভেজে খেয়ে ফেলা ভালো। ডালের স্বাদও মন্দ নয়। কিন্তু একদম ভালো লাগে না রুইকাতলা, এমনকি শিং, শোল। শোল চাষ করে অনেকে নাকি বেশ আছে। তা থাকুক। কিন্তু এর স্বাদের বারোটা বাজল যে! শোলের বদলে বাজারে গেলে গজাল (গজার) খুঁজব ঠিক করেছি। কম পাওয়া যায়, দামেও অপেক্ষাকৃত কম। সাইজে ছোট চাষের কই তাও মুখে নেওয়া যায়, বড়টা বেশি তেলতেলে।
তুলনায় তেলাপিয়া ভালো। দুর্গন্ধ না হলে এর স্বাদ রুইকাতলার চেয়ে ভালো মনে হয়, যদিও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কথা আছে। এক বন্ধু কদিন আগে ফেসবুকে লিখেছিলেন, সব মাছের স্বাদ একরকম লাগে বা করে ফেলা হয়েছে। সহমত ভাইদের ভয়ে ওখানে মন্তব্য করিনি যে, এরই নাম বুঝি উন্নয়ন!
যাহোক, উন্নয়ন করতে থাকুন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা কাল এক অনুষ্ঠানে মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের সময় এসব মনে এসেছিল। রাতে রুইয়ের কারি খাওয়ার সময় মেজাজ গেল বিগড়ে। খাওয়ার টেবিলে বলছিলাম, এর চেয়ে আলু ভর্তা খাওয়া ভালো নয় কি? কিংবা পটল ভাজি? এলিজা বলল, সব সবজি দিয়েই ভর্তা করা যায়। সঙ্গে সুগন্ধি লেবু, আচার হলে কী লাগে আর! আচারেও বৈচিত্র্য এসেছে। অনেক কিছুর আচার সহজে করা যায় এখন।
এখানে সবজির দামের কথা অনেকে বলবেন জানি। মাছের দাম কি কম? চালের দাম? আটাময়দা? ভোজ্যতেলের দাম? তাহলে সবজির দামও বাড়বে। যারা সবজি ফলায় আর বেচে, তাদের কি ওইসব কিনতে হয় না? রেস্তোরাঁয় খেতে হয় না? উপকরণের দাম বৃদ্ধির সুবাদে ওখানে খাবারের দাম যে কীভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তার তদন্ত যদি কেউ করতো! যাহোক, কথা হচ্ছিল চাষের মাছের স্বাদ নিয়ে। এ মাছ নিয়ে তো বাটপারিও আছে। কম জানাবোঝাদের চাষের মাছ গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘দেশি’ বলে। বাটপারে ভরে গেছে দেশ এবং উপর থেকে একে উৎসাহিত করা হচ্ছে। লিখতে লিখতে মেজাজও হয়ে যাচ্ছে খারাপ। সেটা আমার সঙ্গে বেমানান হবে। এ প্রসঙ্গে তাই এখানেই থামলাম।