৬ মাসে প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে উপক্ষিত ভোক্তা-অধিকার : ক্যাব
মো. আখতারুজ্জামান : দেশের ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণ করলেও সামাজ্যবাদের আগ্রাসন থেমে নেই। শুরুতে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করলেও এখনও তাদের ভূমিকা অদৃশ্যভাবে বহাল রয়েছে। মঙ্গলবার কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়।
গত চলতি বলছরের ২০ জুলাই ৫৩টি ওষুধের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সরকার পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর মধ্যে বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, এমোক্সিলিন, ডায়াজিপাম, ফেনোবারবিটাল, এসপিরিন, ফেনোক্সিমিথাইল পেনিসিলিনসহ অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ উল্লেখযোগ্য। এইসব ওষুধের দাম গত ছয় মাসের ব্যবধানে ১৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে শুধু প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। এছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এন্টিবায়োটিক, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রেসারের ওষুধ ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত।
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গত জুলাই মাস হতে বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। ২০ মিলিগ্রামের একটি অম্রপিপাজ্যাল ট্যাবলেট এর দাম ছিল ৫ টাকা তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬ টাকা। ২০ মিলি গ্রামের রেবি ব্রাজিলের দাম ছিল ৫ টাকা তা বাড়িয়ে ৭ টাকা করা হয়েছে। এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের দাম বেড়েছে ১৭ থেকে ২০ শতাংশ। প্রতিটি ৫০০ মিলিগ্রামের সিডিউরিক জিম ট্যাবলেটের দাম ছিল ৫০ টাকা তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬০ টাকা। ২৫০ মিলি গ্রামের প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ছিল ৩০ টাকা তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। প্রেসার ও হার্টের ওষুধের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
লুসার্টন পটাশিয়াম পাঁচ মিলিগ্রামের একটি ট্যাবলেটের দাম ছিল ৮ টাকা তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০ টাকা। পাঁচ মিলিগ্রামের এমডোলোপিনের দাম ছিল ১০ টাকা সেটি ১২ টাকা করা হয়েছে। দুই মিলিগ্রামের একটি প্রাজোসিন ট্যাবলেট এর দাম ছিল ১০ টাকা, হয়েছে ১২ টাকা আর ৫ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট করা হয়েছে ১৫ টাকা হতে ১৭ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে প্যারাসিটামল সিরাপের। গত তিন-চার মাসের ব্যবধানে প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বেড়েছে ৭৫%, ট্যাবলেটে বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ। ২০ টাকার প্যারাসিটামল সিরাপের দাম বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে, ৮০ পয়সার ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা আর ১ টাকা ৫০ পয়সার প্যারাসিটামল বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আইভি ফ্লুয়িড জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের জন্য গঠিত টেকনিক্যাল সাব-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। ০৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২১টি জেনেরিক ৫৮টি পদের কস্টিং শিট পর্যালোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে কলেরা স্যালাইন, হার্টম্যান সলুশন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ডেক্সটোজ, ডেক্সটোজ প্লাস সোডিয়াম ক্লোরাইড, মেট্রোডিজানল ও হিউম্যান ইনসুলিন। দেশে যখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী তখন ওষুধের মতো এতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকার ওষুধেরমার্ক-আপ কমিয়ে ওষুুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত বলে আমরা মনে করছি।
কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব আজ এক টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২৫-২৮ টাকা কেজির আটার দাম বেড়ে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে ওষুধের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের ওষুধ শিল্প ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২-৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। অবশিষ্ট ওষুধ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হতো। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৭০ ভাগ ওষুধ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির পর দেশে ওষুধ তৈরির কারখানা চালু হয়। এরপর এই শিল্পকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এখন চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধের বাজার বিস্তার লাভ করেছে।
দেশে ওষুধ শিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল এখনও বিদেশ-নির্ভর। শতকরা ৯৭ ভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই মূলত ভারত ও চীন থেকে আসে। কিছু কাঁচামাল আসছে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে। তবে নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধা বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সুপারিশসমূহ:
ইতিমধ্যে প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইভিফ্লুয়িড জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধি প্রক্রিয়াধীন। এরূপ একতরফাভাবে যখন খুশী তখনযত খুশী তত বেশি মূল্যবৃদ্ধি করা ভোক্তা অধিকার ও স্বার্থের পরিপন্থী। সুতরাং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অনতিবিলম্বে বৃদ্ধি করা ওষধের মূল্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা রিভিউ করার দাবি জানানো হলো। উক্ত রিভিউ না হওয়া পর্যন্ত আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করারও দাবি করা হলো।; ১৯৯৪ সালের কালো আদেশটি বাতিল করতে হবে। ওই আদেশের কারণে কোম্পানিগুলো যখন তখন ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এখন ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে তালিকাভুক্তওষুধের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।; ওষুধের কাঁচামাল এবং অন্যান্য ওষুধ আমদানিতে মার্ক-আপ কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধের মার্ক-আপ ছিল ৩.৪। মার্ক-আপ কমানো গেলে ওষুধের দাম কমে আসবে।; আমদানিকৃত ওষুধেমার্ক-আপওকমাতে হবে।; সরকারকে ভর্তুকি দিয়েওষুধের দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।; স্যালাইন তৈরি ও বাজারজাতকরণ সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা আইপিএইচ এর মাধ্যমে করতে হবে। ৫০ পয়সার প্যারাসিটামল বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আইভি ফ্লুয়িড জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণের জন্য গঠিত টেকনিক্যাল সাব-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। ০৬টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২১টি জেনেরিক ৫৮টি পদের কস্টিং শিট পর্যালোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে কলেরা স্যালাইন, হার্টম্যান সলুশন, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ডেক্সটোজ, ডেক্সটোজ প্লাস সোডিয়াম ক্লোরাইড, মেট্রোডিজানল ও হিউম্যান ইনসুলিন। দেশে যখন প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী তখন ওষুধের মতো এতো প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকার ওষুধেরমার্ক-আপ কমিয়ে ওষুুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত বলে আমরা মনে করছি।
কভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্ব আজ এক টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২৫-২৮ টাকা কেজির আটার দাম বেড়ে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে ওষুধের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের ওষুধ শিল্প ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। স্বাধীনতার আগে দেশে মাত্র ২-৩ শতাংশ ওষুধ তৈরি হতো। অবশিষ্ট ওষুধ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হতো। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৭০ ভাগ ওষুধ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির পর দেশে ওষুধ তৈরির কারখানা চালু হয়। এরপর এই শিল্পকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এখন চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও ওষুধের বাজার বিস্তার লাভ করেছে।
দেশে ওষুধ শিল্প বিস্তার লাভ করলেও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল এখনও বিদেশ-নির্ভর। শতকরা ৯৭ ভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই মূলত ভারত ও চীন থেকে আসে। কিছু কাঁচামাল আসছে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে। তবে নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পেয়ে আসছে যা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল রয়েছে। তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হলে এই সুবিধা বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সুপারিশসমূহ:
ইতিমধ্যে প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইভিফ্লুয়িড জাতীয় ওষুধের দাম বৃদ্ধি প্রক্রিয়াধীন। এরূপ একতরফাভাবে যখন খুশী তখনযত খুশী তত বেশি মূল্যবৃদ্ধি করা ভোক্তা অধিকার ও স্বার্থের পরিপন্থী। সুতরাং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অনতিবিলম্বে বৃদ্ধি করা ওষধের মূল্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি দ্বারা রিভিউ করার দাবি জানানো হলো। উক্ত রিভিউ না হওয়া পর্যন্ত আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত করারও দাবি করা হলো।; ১৯৯৪ সালের কালো আদেশটি বাতিল করতে হবে। ওই আদেশের কারণে কোম্পানিগুলো যখন তখন ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এখন ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে তালিকাভুক্তওষুধের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।; ওষুধের কাঁচামাল এবং অন্যান্য ওষুধ আমদানিতে মার্ক-আপ কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আইভি ফ্লুইড জাতীয় ওষুধের মার্ক-আপ ছিল ৩.৪। মার্ক-আপ কমানো গেলে ওষুধের দাম কমে আসবে।; আমদানিকৃত ওষুধেমার্ক-আপওকমাতে হবে।; সরকারকে ভর্তুকি দিয়েওষুধের দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।; স্যালাইন তৈরি ও বাজারজাতকরণ সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বা আইপিএইচ এর মাধ্যমে করতে হবে।