বীজ আলুর দাম বাড়ায় বিপাকে কৃষক
আমিনুল জুয়েল: এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ বীজ আলুর দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ভালো ফলন ও দাম পেতে আগাম আলু চাষে ঝুঁকছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার আলুচাষীরা। সাধারণত কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে আলু লাগানো চলে পুরো অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। অনেকেই বোরো-আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে আলু লাগানো শুরু করে। এই উপজেলায় অনেকে আলু লাগানো শেষ করলেও দাম কমেনি বীজ আলুর।
আলুচাষীরা জানান, চলতি বছরে বীজ আলু এবং সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বীজ আলু, সার ও শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই শীতকালীন ফসল সরিষা চাষ করছেন। বীজের দাম বেড়ে যাওয়াই কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা।
সরেজমিনে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় আগাম জাতের আলু লাগানো হয়েছে। অনেক এলাকায় এখনও আলু লাগানো হ”েছ। চলতি মাস (অগ্রহায়ণ) পর্যন্ত চলবে আলু লাগানো। তবে, বীজের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই কিনতে পারছেন না আলুর বীজ। আবার অনেকেই চাহিদার চেয়ে কম কিনছেন। কৃষকরা বলছেন, এই উপজেলায় আলু সংরক্ষণাগার না থাকা, আলুর দাম কম হওয়া এবং বীজ- সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই কম আলু চাষ করছেন। ফলে আলু উৎপাদনে সংকট দেখা দিতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীজ আলুর বিক্রয় মূল্য কমানো না হলে চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ অনাবৃষ্টিতে এই অঞ্চলের আমনের ফলন তেমন ভালো হয়নি। এজন্য কৃষকরা বেশি দামে গুণগত মানের বীজ কিনতে পারবেন না। মানহীন বীজ ব্যবহার করার কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উপজেলার কোমারভোগ গ্রামের আলুচাষী মইন মিয়া জানান, ‘গত সপ্তাহে সাড়ে নয়শ’ টাকা দরে এক মণ আলুর বীজ কিনেছিলাম। সেই বীজ আজ বিক্রি হ”েছ ১২শ’ থেকে ১২৫০ টাকায়। জমিতে বীজ কম হওয়ায় আজ নতুন করে বীজ কিনতে এসেছি। কিন্তু বীজের দাম বেশি হওয়ায় আধামণের জায়গায় কিনেছি দশ কেজি।
অভিযোগ করে এই কৃষক আরও জানান, কোনো জিনিসেরই দাম ঠিক থাকছেনা। ১১০ টাকা ধারার (৫ কেজি) পটাশ হয়েছে ১৭০। আমরা কৃষক। আমরা এইসব কষ্টের কথা কাকে বলবো? কে শুনবে আমাদের এই অভিযোগ? দিন দিন আমরা কৃষকরা জিম্মি আর অসহায় হয়ে পড়ছি।
পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাটের তিলকপুর গ্রাম থেকে আলু বীজ বিক্রি করতে এসেছেন ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ। তিনি জানান,বীজ আলুর দাম বেড়েছে। এজন্য বিক্রি কমেছে।
তিনি আরো জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে আলুর বীজ।
সদরের কুসুম্বী গ্রামের ভ্যানচালক এবং আলুচাষী লোকমান আলী জানান, ভুটান ও ফাটা পাকরি আলু ৬০ দিনেই খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
এজন্য এই বীজের চাহিদা বেশি। তবে, দেশি আলু ১শ’ দিন পূর্ণ করে ঘরে উঠাতে পারলে সেটি পুষ্ট এবং পরিপক্ক হয়। সারা বছর বাড়িতে রেখে খাওয়া যায়।